মাহফুজ আনামের শাস্তি ও ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি সংসদে

0
527

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা তথ্য যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করায় ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদ থেকে। পাশাপাশি একই অপরাধে পত্রিকাটির সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজ আনামের পদত্যাগ, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের ও বিচারের মাধ্যমে তাঁর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন সংসদ সদস্যরা। গতকাল রবিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে  বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এ দাবি জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিতর্কে অংশ নেন আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শামসুল হক টুকু, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, নূরজাহান বেগম, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী। অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে ফজলে নূর তাপস অবিলম্বে মাহফুজ আনামের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় মিথ্যা অপবাদ দিতে সাজানো গল্প ছাপানো ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর জন্য অবিলম্বে মাহফুজ আনামের পদত্যাগ এবং অনতিবিলম্বে পত্রিকাটি বন্ধের দাবি করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাহফুজ আনামের মতো লোকেরা অসাংবিধানিক সরকার এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য সারা জীবনই ষড়যন্ত্র করে গেছেন, এখনো করছেন। এটা আর কোনোভাবে বরদাশত করা যায় না। মাহফুজ আনাম সাংবাদিকতা নামক মহান পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। তাই তাঁর আর কোনো পত্রিকার সম্পাদক থাকার অধিকার নেই এবং পেশাকে কলঙ্কিত করার জন্য উনি যাতে আর সাংবাদিকতা করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। আর ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমান একজন করাপ্ট (দুর্নীতিবাজ)। সন্ত্রাসী বাহিনী উলফার সঙ্গে যাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুতরাং এঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘মিথ্যা বেসাতি নিয়ে কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী দেশের ক্ষতি করলে অবশ্যই তার বিচার হতে হবে। এই সংসদে অনেক এমপি আছেন, যাঁরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু যাদের স্বাধীনতার জন্য লড়ছি, তারা যদি স্বাধীনতাকে বর্ম বানিয়ে সমগ্র জাতিকে আক্রান্ত করে, সে ক্ষেত্রে সাজার কথা বলা হয়েছে। মাহফুজ আনাম বিচারের আগেই পেপার ট্রায়াল করে ফেলেছেন, তা উনি স্বীকারও করেছেন। যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধ থাকলে প্রথমেই তাঁর পদত্যাগ করে প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত।’ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে উত্খাত, এমনকি হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র সফল করতে মাহফুজ আনামরা মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আত্মস্বীকৃত অপরাধী মাহফুজ আনামকে জাতি কোনো দিন ক্ষমা করতে পারে না। মাহফুজ আনামরা যত বড় শক্তিশালী সম্পাদক হোন না কেন তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ভয়ে বিবেককে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমাদের অধিবেশন কক্ষেও অনেকে বসে আছেন, যাঁরা ওয়ান-ইলেভেনে বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন।’ সরকারি দলের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম জাতির সামনে স্বীকার করেছেন যে উনি ওয়ান-ইলেভেনে তাঁর পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সম্পাদক দায়ী হলে মালিক ও প্রকাশক দায়ী নন, এটা ভাবার অবকাশ নেই। তাঁরা মূলত বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ, দেশের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ এবং গরিব মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে ধ্বংস করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছেন। তাই এই পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় এনে সমুচিত বিচার করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে তাঁরা এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম অবিলম্বে ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য এত বছর পর আলবদর-আলশামসদের বিচার হলে কেন মাহফুজ আনামদেরও বিচার হবে না? তাঁদেরও সাজা পেতে হবে। কোনো কোনো ভুল হলো মৃত্যুতুল্য, কোনো কোনো ভুল হলো বিষতুল্য। মাহফুজ আনাম সেই ভুল করেছেন। তাই তাঁকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। সরকারি দলের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, ‘সাংবাদিকতা হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু একজন সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকতার নামে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন। শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে মাহফুজ আনাম এসব করেছেন। উনাদের টাকা-পয়সার উৎস কোথায় তা দেশবাসী ভালো করেই জানে। এঁদের কাছ থেকে সৎ সাংবাদিকতা কোনো দিনই আশা করা যায় না।’ তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে যারা রাজনীতির চরিত্র হনন করে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র করেছে, এখনো তারা সেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা ঠিক হবে না। তারা যাতে আর সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারে সে জন্য তাদের প্রকৃত মুখোশ জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। সরকারি দলের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় ১১টি মাস বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ মৌলিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আজকে এসে মাহফুজ আনামরা স্বীকার করছেন মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন। উনি আমাদের নৈতিকতার প্রশ্ন তোলেন, বাস্তবে উনিই সবচেয়ে বড় অনৈতিক কাজটি করেছেন। তিনি দোষ স্বীকার করায় এখন নতুন করে সাক্ষ্য-প্রমাণের কোনো প্রয়োজন নেই। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here