ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচ জেলায় আরো পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মামলা দায়ের হলো ৭৪টি। এদিকে ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার ও হয়রানিমূলক মামলা’ দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৩৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এক বিবৃতিতে তাঁরা এসব মামলা প্রত্যাহার এবং স্বাধীন সংবাদ প্রচারে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে কী ধরনের আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মানহানি হয়েছে বলে উল্লেখ করে গতকালে পাঁচ মামলায় ৫০,১৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাগুরায় একটি মামলায় ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে ৫০,০০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে গত ১০ দিনে মানহানির অভিযোগে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ১,৩২,৪৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হলো। গতকাল মাগুরা, নড়াইল, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলায় মানহানির অভিযোগ এবং একটিতে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি মামলায় মাহফুজ আনামকে সশরীরে হাজির হতে সমন জারি করা হয়। ৩৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি : গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি প্রচার করা হয়। বিবৃতিতে বিশিষ্টজনরা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অপপ্রচার ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের ঘটনাগুলো লক্ষ করছি এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ২০০৭ সালের ১/১১-র সময় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত কিছু সংবাদ যাচাই না করে ছাপার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে যে বিরল পেশাগত মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন, সে জন্য তাঁকে প্রশংসিত না করে নানাভাবে হেনস্তা করার এসব ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, বেদনাদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক বলে আমরা মনে করছি। এটি ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের, এমনকি যেকোনো মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভুল স্বীকার করতে নিরুত্সাহ করবে এবং সমাজে মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেবে।’ বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, ড. আকবর আলি খান, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. এ টি এম শামসুল হুদা, ড. হামিদা হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ড. তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, খুশী কবির, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. সি আর আবরার, শিরীন হক, ড. শাহনাজ হুদা, ড. আহমেদ কামাল, আসিফ নজরুল, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান, মো. নূর খান, সাদাফ নূর, ড. ফেরদৌস আজিম, স্বপন আদনান, মাসুদ খান, রুবি গজনবী, লুবনা মরিয়ম, ফরিদা আক্তার, মেজর (অব.) আক্তার আহমেদ বীরপ্রতীক, আনুশেহ আনাদিল, ড. নায়লা জামান খান ও জাকির হোসেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা অবিলম্বে মাহফুজ আনাম ও ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে সকল অপপ্রচার ও মিথ্যাচার বন্ধে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনীত হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা স্বাধীন সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যমগুলোতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ বন্ধে কী ধরনের আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি। ‘আমরা এও মনে করি যে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির যে মামলাগুলো করা হচ্ছে, সেটি আইন ও বিচারব্যবস্থাকে সংকীর্ণ ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের নিন্দনীয় প্রচেষ্টা।’