অন্ধ বিশ্বাস ও মৌলবাদ যেন সৃজনশীলতাকে রুদ্ধ করতে না পারে সে ব্যাপারে ছাত্রদের তৎপর থাকতে বললেন রাষ্ট্রপতি

0
536

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অন্ধ বিশ্বাস ও মৌলবাদ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে যাতে রুদ্ধ করতে না পারে সে ব্যাপারে ছাত্রদের তৎপর থাকার আহবান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জীবনে পথ চলতে গিয়ে কেউ যাতে কোন কিছুর মোহে বা সাময়িক লাভের প্রত্যাশায় বিপথগামী না হয় সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্ধ বিশ্বাস ও মৌলবাদ যাতে সৃজনশীলতাকে রুদ্ধ করতে না পারে সে ব্যাপারে সদা তৎপর থাকতে হবে। শিক্ষাকে মানব কল্যাণে কাজে লাগতে হবে। আকাশ সংস্কৃতি এখন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে মেনেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এর মধ্য থেকেই ভালটুকু গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আজ সকালে এখানে সরকারী আশেক মাহমদু কলেজের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে এ আহবান জানান।
‘একাত্তরে বাঙালি যে মহান চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো সেই চেতনাকে বুকের মধ্যে লালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের আত্মদানকে সার্থক করে তুলতে হলে দেশকে ভালবাসতে হবে’ এ অভিমত রেখে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে দূর করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, যাতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়ে বিশ্বের অপরাপর দেশসমূহের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়। এগিয়ে যাওয়া যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যাচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। নিজেদেরকে আদর্শ দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা নয় বরং তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে দক্ষ মানবসম্পদ উপহার দেয়া। মনে রাখতে হবে শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জীবনে পরিপূর্ণতা আসে। সংস্কৃতি সংসদ, বির্তক ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের মতো সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী করে তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে এবং রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে কলেজের ২৩টি ক্লাসরুমে যুক্ত হয়েছে মাল্টিমিডিয়া। স্থাপিত হয়েছে আইসিটি ক্লাবসহ কম্পিউটারের বেসিক ট্রেনিংকোর্স। আশা করি এসব অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানটিকে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম করে তুলবে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। মহকুমা স্থাপিত হওয়ায় প্রশাসনিক প্রয়োজনে এ জেলায় চাকরিজীবী শিক্ষিত লোকজনের আগমন ঘটে। তখন প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় সুধীমন্ডলী এখানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় সচেষ্ট হন। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আশেক মাহমুদ কলেজ। যে বীজ ১৯৪৬ সালে রোপিত হয়েছিল সে বীজটি বর্তমানে মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের ৭০ বছর পূর্তি-উৎসবে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা লাভ করি লাল সবুজ পতাকা। মুক্তিযুদ্ধে এই প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার সূর্য সৈনিক। প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানিরা কলেজের ডিগ্রি হোস্টেলকে তাই পরিণত করেছিল টর্চার সেলে। এই টর্চার সেলে ১৮২১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা। নাট্যকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হীরক কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন। বিভীষিকার এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষক ইমামুর রশীদ কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তরুণ শিক্ষক হাবিবুল্লাহ দেওয়ান ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হান্নানসহ কলেজের অসীম সাহসী শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিল। আজকের এই দিনে আমি তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শিক্ষার্থীদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই সরকার প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমানোসহ শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। খুব শীঘ্রই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশাল্লাহ্। ইতোমধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সংকট দূর হয়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মঙ্গা বলতে এখন আর কিছুই নাই। চিকিৎসা ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাংকে রিজার্ভ বেড়েছে স্মরণকালের সর্বোচ্চ পরিমান।
তিনি বলেন,স্থল-সীমান্ত চুক্তি, সমুদ্রবিজয়ের মাধ্যমে নতুন ভূখন্ড লাভ বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ একটি প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। অগ্রগতির এই ধারাটিকে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। সবার উপরে দেশকে স্থান দিতে হবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা নয় বরং তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটিয়ে দেশকে দক্ষ মানবসম্পদ উপহার দেয়া। মনে রাখতে হবে শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জীবনে পরিপূর্ণতা আসে।
শিক্ষাকে মানব কল্যানে কাজে লাগতে হবে। আকাশ সংস্কৃতি এখন বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে মেনেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এর মধ্য থেকেই ভালটুকু গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করতে হবে। জীবনে পথ চলতে গিয়ে কেউ যাতে কোন কিছুর মোহে বা সাময়িক লাভের প্রত্যাশায় বিপথগামী না হয় সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কলেজের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের এ শুভক্ষণে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি দেশের সূর্যসন্তান, ভাষা শহীদসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা সুদীর্ঘ সংগ্রামী পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে স্বাধীন করেছেন। বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে বিশ্বসভায় অধিষ্ঠিত করেছেন আপন সত্তায়।
তিনি জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন,হযরত শাহজামাল (র.) এর স্মৃতি বিজড়িত ও ব্রহ্মপুত্র বিধৌত সবুজ সুন্দর জনপদ জামালপুর। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ জনপদের মানুষ সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ব্রিটিশ শাসনামলে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষ বিপুল অবদান রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্তস্নাত ধানুয়া কামালপুর এই জেলাতেই অবস্থিত। কাঁসা শিল্প ও নকশিকাঁথা সারাদেশে জামালপুরের গর্ব গাঁথাকে প্রচার করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখের বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম হীরা এমপি,শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন,স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ,এডভোকেট বাকী বিল্লাহ,মীর্জা শাখাওয়াতুল আলম মনি।
প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে কলেজ ভবন,ক্যাস্পাস,বিভিন্ন স্থাপনা,শহরের বিভিন্ন এলাকা ব্যানার-ফেষ্টুনসহ নানা সাজে-সজ্জ্বিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here