বরিশাল প্রতিনিধি ॥ অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বরিশাল কারাগারে গত দু’মাস ধরে বন্দি পেরুর নাগরিক জেরি ভিক্টরের পরিচয় ও তার সম্পর্কে জানতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আটক বিদেশি নাগরিকের উচ্চতা, ওজন, চুলের রং ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে তা ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। কবে নাগাদ ওই বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। বর্তমানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বিদেশি বরিশাল কারাগারে রয়েছেন। মামলার বর্তমান (দ্বিতীয়) তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) তইয়েবুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আটক বিদেশি তার নাম জেরি ভিক্টর (৫২) বলে জানিয়েছেন। পেরুর রাজধানী লিমায় তার জন্ম। সেখানে তার স্ত্রী ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। জেরি ভিক্টরের ভাষ্যমতে গত বছরের (২০১৪ সালের) ১৯ডিসেম্বর তিনি ভারত হয়ে সড়ক সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এরপর ২১ ডিসেম্বর বরিশালে বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি তাকে অচেতন করে পাসপোর্ট ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা তইয়েবুর রহমান বলেন, জেরি ভিক্টরের ভাষ্যমতে বিপ্লবের অনেক খোঁজ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল ও আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে ওই নামে বা আকৃতির কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি রহস্যের সৃষ্টি হওয়ায় জেরি ভিক্টরের সম্পর্কে জানতে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম জানান, সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকা থেকে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে জেরি ভিক্টরকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে। জ্ঞান ফেরার পর জেরি পুলিশকে জানান, তাকে মারধর করে পাসপোর্ট ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি। এসময় তিনি একটি পাসপোর্ট নম্বর দেন পুলিশকে। নম্বরটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও ওই নম্বরের কোনো পাসপোর্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে জেরি ভিক্টরের বিরুদ্ধে বন্দর থানা পুলিশের এসআই শাহ সাব খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি (জেরি ভিক্টর) কারাগারে রয়েছেন। ওসি আরও জানান, দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জেরি ভিক্টর বলেছেন, খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের জেরি ভিক্টর জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম রেখেছেন মোঃ আব্দুল্লাহ। তিনি সুন্দরভাবে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলওয়াত করতে পারেন। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করায় তার স্বজনদের সাথে জেরি ভিক্টরের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়।
অপরদিকে সম্প্রতি সময়ে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া গৌরনদীর সুন্দরদী এলাকার বাসিন্দা রনি প্যাদা নামের এক যুবক বলেন, পেরুর নাগরিক জেরি ভিক্টর তাকে জানিয়েছেন, পেরুর লিমা শহরে পার্ক ল্যান্ড নামে তার একটি গার্মেন্টস রয়েছে। সে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর লিমা শহরের বাসিন্দা জাগা চিটা ভিক্টরের পুত্র। ওই গার্মেন্টেস্ েকর্মচারী সাহেবেরহাট (বন্দর) থানার কাউয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক বিপ্লব। কয়েক মাস পূর্বে বিপ্লব ছুটিতে দেশের বাড়িতে আসে। তিনি (জেরি) বিশ্ব ইজতেমায় যোগদানের জন্য গত ১৯ডিসেম্বর বৈধভাবেই ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে জেরি ভিক্টরকে বাংলাদেশে রিসিভ করেন তার গামেন্টেস্রে সেই ছুটিতে আসা কর্মচারী বিপ্লব। মালিক জেরি ভিক্টরকে কর্মচারী বিপ্লব তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার উদেশ্যে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে নিয়ে আসেন। ২১ ডিসেম্বর ভোরে লঞ্চ থেকে নেমে বরিশাল নৌ-বন্দর সংলগ্ন খেয়া পাড় হয়ে কীর্তনখোলা নদীর পূর্বতীরে চরকাউয়ায় যান। সেখানকার গ্রামের নির্জনস্থানে নিয়ে বেধম মারধরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন জেরি ভিক্টর। এসময় তার সাথে থাকা ৫ হাজার ইউরো ডলার, মোবাইল ফোন, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনী কাগজপত্র ও অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। রনি প্যাদা আরও বলেন, গত দু’মাসের মধ্যে কারাগারে বসে যাদের সাথেই জেরি ভিক্টরের ঘনিষ্টতা গড়ে উঠেছে তাকেই মুক্তি পাওয়ার সময় অনুনয় বিনয় করে বলেছেন বেড়িয়ে যেন ভারতে অবস্থানরত পেরুর হাইকমিশনে খবর পৌছানো হয়। হাই কমিশনের হস্তক্ষেপ ছাড়া তার মুক্তি ও দেশে ফিরে যাওয়া দুরহ ব্যাপার।
জেরি ভিক্টরের প্রায় দু’মাস যাবত কারাগারে বন্দি থাকার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল কারাগারের সিনিয়র সেল সুপার কামাল হোসেন জানান, বিদেশী নাগরিক হিসেবে কারাগারে আসার সাথে সাথেই বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে দেশের সরকারকে বিষয়টি অবহিত করবেন। জেল সুপার আরও বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বাংলাদেশে পেরুর কোনো দূতাবাস নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে থাকা দূতাবাস থেকে তারা কাজ করায় কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। জেরি ভিক্টরে কারাগারে বসে কর্মকর্তাদের সাথে তার পরিবার সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে খ্রীষ্টান ধর্ম ছেড়ে মুসলমান হওয়ার পর তাকে পরিবারের সদস্যরা ঘৃনার চোখে দেখেন। কোনো প্রকার সম্পর্ক তার সাথে রাখতে তারা আগ্রহী নন।