সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে : শেখ হাসিনা

0
346

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা’র এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক ভিত্তিক আর্থিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, সরকার বিগত মেয়াদ থেকে ‘রূপকল্প-২০২১’, ‘দিন বদলের সনদ’ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিগত ৭ অর্থবছরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় দেশজ আয় প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে আমাদের সাফল্য অভূতপূর্ব। সংকটের জাল ছিন্ন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১’ প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১০-১৫ বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০ দলিলটি ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবরে অনুমোদন করা হয়েছে।
শেখ হাসিানা বলেন, গত ৭ অর্থবছরের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ৬ দশমিক ৩১ ভাগ। এর আগে মাথাপিছু জিডিপি দ্বিগুণ থেকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হলেও আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টায় মাত্র ৮ বছরে তা দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। সরকারি বিনিয়োগ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১-০৬ সময়ের তুলনায় ২০০৯-১৪ সময়কালে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব ও রাজস্ব কর চার গুণের বেশি বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, অর্থবছর ’১১ থেকে অর্থবছরে ’১৫ সময়ের মধ্যে দেশে ও বিদেশে মিলে প্রায় ১০ দশমিক মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স হয়েছে ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদার গতি সচল রাখতে গ্রামীণ অর্থনীতি, বিশেষ করে, পল্লী উন্নয়ন ও কৃষি খাতে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৯১টি হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্প খাত বিকাশে গুরুত্ব প্রদান করে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রফতানি খাতের উন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, সীমাবদ্ধতা এবং ষড়যন্ত্র-নাশকতা মোকাবেলা করে সরকার দেশ পরিচালনা করছে। রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে, সে কারণে তার দৃষ্টি কেবল এক বছরে সীমাবদ্ধ নয়। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১ সালে জাতির দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা প্রণয়ন করছে সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here