‘আমি মারা যাচ্ছি’ আইএসের হাতে বন্দী সুইডিশ কিশোরীর আর্তি

0
352

মেরিলিন নেভালেইনেন যখন সুইডেন ছাড়ে তখন তার বয়স মাত্র ১৫ এবং সে ছিল গর্ভবতী। আইএসে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সে সুইডেন ছেড়ে গেলেও তখনও জঙ্গি গ্রুপটি সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না।
কিন্তু ইরাকের মোসুলে আইএসের কাছে বন্দী থাকাকালে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে কাটাতে মুক্তির জন্যে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। মায়ের কাছে উদ্ধারের আহ্বান জানাতে থাকে মেরিলিন। শেষ পর্যন্ত ইরাকের কুর্দি বাহিনী তাকে উদ্ধার করে এবং দেশে ফেরত পাঠায়।
শুক্রবার সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেরুনিকা নর্ডলান্ড জানান, মেরিলিন পরিবারের সাথেই সুইডেন ফিরেছে। সে মূলত সুইডেনের বোরাস শহরের বাসিন্দা।
মেরিলিন তার বাবা-মায়ের সাথে বৃহস্পতিবার সুইডেন এসে পৌঁছে। গত ৮ মাসে তার বাবা-মা বেশ কয়েকবার ইরাক গেছে শুধু তাকে উদ্ধার করতে।
পুলিশ বলছে, বন্ধু মুক্তার মোহাম্মদ আহমেদের সাথে সে সিরিয়া যায়। মোহাম্মদ মরক্কোর নাগরিক। সে ২০১৩ সালের আগস্টে ১৭ বছর বয়সে একাই সুইডেন আসে। তবে এখন সে মৃত। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানায়নি।
কুর্দিস্তান রিজিওনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কুর্দি বাহিনী মোসুলের কাছ থেকে কিশোরীটিকে উদ্ধার করে।
মেরিলিন তার উদ্ধার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে টিভি চ্যানেল কুর্দিস্তান ২৪কে এক সাক্ষাৎকারে বলে, ২০১৪ সালে মুক্তার মোহাম্মদ আহমেদের সাথে তার সাক্ষাত ঘটে। মোহাম্মদ আইএসের ভিডিও দেখে বিপ্লবী হয়ে যায়।
মেরিলিন বলে, আহমেদ আইএসে যোগ দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। আমিও বলি, অসুবিধা নাই। কারণ আমি জানতাম না আইএস মানে কি, কিংবা ইসলাম সম্পর্কেও কোন ধারণা ছিল না।
২০১৫ সালের মে মাসে তারা সুইডেন ত্যাগ করে। তখন মেরিলিন গর্ভবতী। তারা ট্রেন ও বাসে করে ইউরোপ পাড়ি দিয়ে তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে। আইএস সেখান থেকে তাদের ইরাকের মোসুলে নিয়ে যায়।
মোসুলে দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনায় মেরিলিন বলে, ‘আমার ঘরে বিদ্যুৎ, পানি কিছুই ছিল না। অথচ সুইডেনে আমি যেখানে ছিলাম সেখানে সব ছিল। কিন্তু মোসুলে আমার কাছে কিছুই ছিল না এমনকি অর্থ পর্যন্ত। এটি ছিল খুবই কঠোর জীবন।’
সে আরো বলে, যখনই আমার হাতে ফোন আসে তখনই মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। আমি বাড়ি যেতে চাই, এ কথাই বার বার মাকে বলি। মা পরে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে।
সে সময়ে মাকে সে যে বেপরোয়া বার্তা পাঠায় তা প্রকাশ করেছে সুইডিশ গণমাধ্যম। সে লিখেছে, আমি বোমা হামলায় মারা যাচ্ছি অথবা তারা আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে অথবা আমি নিজেই নিজেকে হত্যা করবো। সত্যিই আমি আর বাঁচতে পারছি না।
সুইডিশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরাকে সে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তানসহ তাকে সুইডেনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা উলফ হফম্যান জানান, মুক্তার মোহাম্মদ আহমেদ সন্দেহভাজন চোর। তবে সে কিভাবে মারা গেল সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।
কাকতালীয়ভাবে মোহাম্মদের সুইডেন ছাড়ার সময়টাতেই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমনজারি করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here