বরিশাল প্রতিনিধি ॥ প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে দায়ের করা অসংখ্য মিথ্যে মামলা থেকে স্বামী ও শ্বশুর পরিবারের সদস্যদের রক্ষা এবং গর্ভের সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে পিতা-মাতার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে অসহায় সাদিয়া ফারহানা আইনী সহায়তা পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ল, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার সাঈদ হাওলাদারের কন্যা সাদিয়া ফারহানা লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার বাবা স্ব-পরিবারে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকার ৪১/৩, চৌধুরীপাড়া, মালিবাগে বসবাস করে আসছেন। দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের সম্পর্কে আমি (ফারহানা) ইতালী প্রবাসী একই এলাকার জাহিদুল ইসলামকে ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করি। এখবর জানতে পেতে আমার বাবা সাঈদ হাওলাদার পরেরদিন জাহিদসহ তার পরিবারের সদস্যদের আসামি করে ধানমন্ডি থানায় মিথ্যা অভিযোগ (৭/৩০) ধারায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন (যার নং ১০)।
লিখিত বক্তব্যে ফারহানা আরও উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে আমার স্বামীসহ তার পরিবারকে হয়রানি করার জন্য একইবছর ২৩ নভেম্বর আমার মামাতো ভাই এনামুল হককে বাদি করে জাহিদসহ তার পরিবারের আটজনকে আসামি আরো একটি অপহরন মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৯ নভেম্বর আমি (ফারহানা) ঢাকা মেট্রোপলিটন মেজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে ২২ ধারায় আমি অপহরন হয়নি মর্মে জবানবন্দি প্রদান করি। সে অনুযায়ী আদালত আমাকে নিজ জিম্মায় আসার রায় দেয়। একই বছরের ৩ ডিসেম্বর আমার মামা চুন্নু মিয়া মাদারীপুর আদালতে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে একের পর এক পুলিশ দিয়ে আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের হয়রানি চালাচ্ছেন। গত ৪ মাস বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে থাকতে গিয়ে স্বামীসহ আমি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পুলিশ দিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি আমার ননদ উম্মেহানিকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ জানায় আমাকে পেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তখন আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রাজৈর থানার আত্মসমর্পন করি। ওসি হুমকি দিয়ে বলে আমি আমার বাবার পরিবারে ফেরত গেলে সে এক সপ্তাহের মধ্যে সব মামলা উঠিয়ে নিবে। আমি তখন আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমাকে নেয়ার পরই বাবার বাড়ির লোকজনে আমাকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। যখন তারা জানতে পারে আমি অন্তঃসত্ত্বা তখন আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে আমার মামা পান্না মাতুব্বর আমার পেটে লাথি মারে। যার কারনে আমার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আবীর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ জামাল আরা বেগমের মাধ্যমে গর্ভপাত করানো হয়। পরবর্তীতে আমাকে বাসায় নিয়ে পুনরায় অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি পালিয়ে আমার স্বামীর কাছে চলে আসি। আমার মামারা ওই এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় আমি নিজ এলাকায় কোন আইনী সহায়তা পাচিছনা। মামা পান্নু মাতুব্বর রাজৈর পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবং আরেক মামা ওহাব মাতুব্বর রাজৈর থানা বিএনপির সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করে অসহায় সাদিয়া ফারহানা বলেন, আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার অনাগত সন্তানের হত্যার বিচার চাই। যে সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ফারহানার স্বামী জাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।