২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর অত্যাচারের জন্য দু’জন সম্পাদক দায়ী : প্রধানমন্ত্রী

0
445

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শিক্ষক, ছাত্র, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর অত্যাচারের জন্য দু’জন সম্পাদক দায়ী।
তিনি বলেন, এই দুই সম্পাদক ওই সময় সরকারের সাথে ষড়যন্ত্র করে রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে।
তিনি গতকাল দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিডিয়ার জন্য যত কিছুর সুযোগ আমি সৃষ্টি করে দিয়েছি এতো সুযোগ আর কখনো কেউ দেয়নি। কিন্তু আমিই সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয়েছি। দু’টি পত্রিকা ২০টি বছর আমার বিরুদ্ধে অনবরত লিখেই গেছে। ২০০৮ সালে আমি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকে ওই দু’টি পত্রিকা আমি পড়ি নাই। আর সরকার প্রধান হওয়ার পর মোটেও পড়ি না। কারণ আমি জানি তারা সব সময়ই ভাল কথা লিখলেও শেষ বেলায় গিয়ে একটা খোঁচা দিবে। আর এ খোঁচা খেয়ে আমি হয়তো আমার আত্মবিশ্বাস হারাবো। তাই আমি এ দু’টি পত্রিকা পড়ি না। কারণ আমি জানি তারা কি লিখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সত্য কখনো চাপা থাকে না। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে একজন সম্পাদক প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের মুখে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য তার পত্রিকা দিনরাত যা লেখালেখি করেছে এগুলো নাকি ডিজিএফআই তাকে সাপ্লাই দিয়েছে। অথচ ওই পত্রিকার উপরে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। ইংরেজি, বাংলা অর্থাৎ ডেইলি স্টার, প্রথম আলো। নামগুলো খুব সুন্দর হলেও এদের কাজ অন্ধকারের। এদের কাজ ডিজিএফআইয়ের লেখা ছাপানো। কিন্তু এই লেখাগুলোতে সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এরা ডিজিএফআই’র এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর সবাই মনে করেছিল এরা নির্বাচন দিবে। কিন্তু দেখা গেলো এরা স্থায়ীভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসার ষড়যন্ত্র করছে। তখন বিরোধী দলের নেত্রী থাকলেও সেই ষড়যন্ত্রের প্রথম আঘাত হানা হয় আমার ওপর। আমাকেই প্রথম গ্রেফতার করা হয়। আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হয়। বিএনপির সময় এক ডজন মিথ্যা মামলা আর তত্ত্বাবধায়ক এসে আরো ৫/৬টি মিথ্যা মামলা দেয়। আর এ মামলা দেয়া ও গ্রেফতারের আগে ওই দুই পত্রিকা মিথ্যা ও অসত্য তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করে গেছে। আর এ অসত্য তথ্যের সাপ্লাইয়ার ছিল ডিজিএফআই। আর ওই ডিজিএফআই হচ্ছে একজন ব্রিগেডিয়ার আমিন ও অপরজন ব্রিগেডিয়ার বারী। তাদের অত্যাচারে এদেশের শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক কেউ রেহাই পায়নি। প্রত্যেকের ওপর এরা অত্যাচার করেছে। যখন যাকে খুশি ধরে অত্যাচার-নির্যাতন করে জেলে পুরিয়ে দিয়েছে। তাহলে যারা ওই সময় এভাবে শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের সাথে কি এমন সখ্যতা ছিল ওই এডিটরের? তাদের সাথে মাহফুজ আনাম ও মতিউর রহমানের কি সখ্যতা ছিল এটার জবাব কি তারা দিতে পারবে? এরা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। মাইনাস-টু-ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য, আমাকে রাজনীতিতে চিরতরে বিদায় দেয়ার জন্য অথবা নির্ভীক সাংবাদিকতা না, এরা ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। অথবা তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এসব করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যদি ষড়যন্ত্রেই লিপ্ত না থাকে তাহলে এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ ছাপাবেন কেন? যাদের দ্বারা সবাই অত্যাচারিত তাদের দ্বারা এ দু’জন লালিত-পালিত। এরা ব্রিগেডিয়ার আমিন আর বারীর চোখের তারায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এদের চেষ্টাই সব সময় বাংলাদেশে যেন অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ অসাংবিধানিক পন্থায় কেউ ক্ষমতায় আসুক এরা এটাই চায়। অসাংবিধানিক পন্থায় এদেশ চললে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের ধম বন্ধ হয়ে যায়। এই জন্য তারা গণতন্ত্র চায় না।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার যদি এতই ইচ্ছা থাকে তাহলে দল গঠন করে রাস্তায় নামুক। আমরা রাস্তায় নেমে জনগণের কথা বলতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতন, জেল-জুলুম অত্যাচার অনেক সহ্য করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে আমরা রাজনীতি করেছি। সারা জীবন যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি। রাজনীতি করার বা ক্ষমতায় যাওয়ার এতোই শখ থাকে তাহলে মানুষের ভোট নিয়ে আসুক। মানুষের ভোট ও জনগণের প্রতি বিশ্বাস নেই বলেই ডিজিএফআইয়ের সাথে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এ স্বপ্নের সাথে আরো একজন জড়িত যিনি দল গড়ার ঘোষণা দিয়ে ১/১১ এর সরকারকে ডাবল এ-প্লাস দিয়েছেন। তার দেয়া তালিকা নিয়ে একজন সম্পাদক দলের লোক গোছাতে নেমে পড়লেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়ে লোক সংগ্রহের চেষ্টা করলেন। এ মোবাইল ফোনের ব্যবসাটিও আমি তাকে দিয়েছি। কিন্তু তিনি আর দল করতে পারেননি। একটা দল করার যার ক্ষমতা নেই ব্যাংকের একটি এমডির পদ ১০ বছর অবৈধভাবে আঁকড়ে থেকে আইনী লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর দোষ দেয়া হলো সরকারের। তার ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। নোবেল প্রাইজ পেয়েও যিনি এমডির পদ ছাড়তে পারেননি তাহলে সেখানে এমনকি মধু রয়েছে?
তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করছে। বাংলাদেশ যে পারে এটা প্রমাণ দিয়েছে। এদের ষড়যন্ত্র এখন শেষ হয়নি। এরা এখনো ভাবে কোনভাবে যদি একটু গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করা যায় আর অগণতান্ত্রিক পন্থায় যদি কেউ আসে তাহলে তাদের কপাল খুলে যাবে। আল্লাহ রহমতে বাংলাদেশে আর তা হবে না, বাংলাদেশের মানুষ অনেক সচেতন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here