পাকিস্তানকে বিদায় দিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ ভারত

0
337

বোলার-ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে দ্বিতীয় দল হিসেবে এশিয়া কাপ টুয়েন্টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারত। টুর্নামেন্টের অষ্টম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে নাম লেখায় মাশরাফিবাহিনী। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১২৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৫ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় ও ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ। দলকে ফাইনালে তোলার নায়ক সৌম্য সরকার। ৪৮ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেন তিনি।
জিতলেই ফাইনালের চেয়ারে গিয়ে বসবে বাংলাদেশ। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে হিসাব-নিকাশটা বেশ ধারালো। টস নিয়ে লড়াই গিয়ে সেই ধারালো হিসাব-নিকাশের কিছুই দেখাতে পারলো না বাংলাদেশ। কারণ টস ভাগ্যে জিতে চওড়া হাসিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি।
আফ্রিদির সেই চওড়া হাসিতে পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই জল ঢেলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। ম্যাচ নিয়ে ধারালো হিসাব-নিকাশটা বল হাতে প্রমান করেন তাসকিন আহমেদ-আল আমিন হোসেন-আরাফাত সানি ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাখা দেয়ার আগে পাকিস্তান ইনিংসে প্রথম ১০ ওভারই স্পষ্ট করে দিবে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের কতটা নাকানি-চুবানি দিয়েছেন তাসকিন-আল আমিন-সানি-মাশরাফি। ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৩৪ রান ছিলো পাকিস্তানের।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে পাকিস্তানের ওপেনার খুররাম মঞ্জুরকে ১ রানে বিদায় জানান আল-আমিন। তাতে উৎসাহি হয়ে উঠেন মাশরাফি। তাতে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্বান্ত নিয়ে চতুর্থ ওভারেই সানিকে আক্রমনে আনেন ম্যাশ। দলনেতা ও মাঠে উপস্থিত প্রায় ৩৪ হাজার দর্শক এবং টিভি সেটের সামনে অগনতি বাঙ্গালী ক্রিকেট অনুরাগীতে আনন্দে ভাসান সানি। ১০ রান করা খুরামের উইকেট উপড়ে ফেলেন সানি।
আল আমিন ও সানির পাশে উইকেট শিকারী হিসেবে নাম লেখান মাশরাফি। তিন নম্বরে নামা মোহাম্মদ হাফিজকে ২ রানে আউট করেন ম্যাশ। উপরের সারির তিন ব্যাটসম্যান ফিরে যাবার পর পুরোই নড়বড়ে হয়ে পড়ে পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের অবস্থাকে আরও নাজুক করে দেন তাসকিন। মিডল-অর্ডারে খেলতে নামা উমর আকমলকে ৪ রানের বেশি করতে দেননি তাসকিন।
৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান যখন ধুঁকছে, তখন দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টায় নামেন সরফরাজ আহমেদ ও শোয়েব মালিক। বাংলাদেশ বোলারদের দিকে অতিমাত্রা মনোযোগী হয়ে খেলতে থাকেন তারা। দ্রুত রান তোলার চেয়ে উইকেটে সেট হবার দিতে ঝুঁেক পড়েন সরফরাজ ও মালিক। তাতে পাকিস্তানের রান রেট ঘুরপাক খায় ৩.৫০ থেকে ৩.৮০-এর মধ্যে। ফলে বড় স্কোর গড়ার পথটা অনেকাংশেই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের।
তাই সম্মানজনক স্কোরের দিকেই নিজেদের লক্ষ্য স্থির করেন সরফরাজ ও মালিক। তাই উইকেট সেট হয়েই মারমুখী হয়ে পড়েন তারা। তাতে শেষ ৫ ওভারে ৫০ রান পায় পাকিস্তান। ফলে ৭ উইকেটে ১২৯ রানের সম্মানজনক স্কোর দাড় করাতে পারে তারা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনি¤œ স্কোর পাকিস্তানের।
পাকিস্তানকে সম্মানজনক স্কোরে পৌছে দিয়েছে সরফরাজ ও মালিকের জুটি। পঞ্চম উইকেটে এই দু’জন যোগ করেন ৫০ বলে ৭০ রান। মালিক ৩০ বলে ৪১ রান করে ফিরে গেলেও, ৪২ বলে ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সরফরাজ। তার ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কার মার ছিলো। ৫টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারিতে নিজের ইনিংস সাজান মালিক। বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে আল-আমিন হোসেন ৩টি, আরাফাত সানি ২টি এবং তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ১টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ জিততে ও ফাইনালে যাবার জন্য ১৩০ রানের লক্ষ্য নিয়ে নিজেদের ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের শেষ বলে দুর্দান্ত এক ফ্লিক শটে ডিপ স্কোয়ার দিয়ে ছক্কা হাকান সদ্য পুত্র সন্তানের বাবা হওয়া তামিম ইকবাল। তাতে মনে হচ্ছিলো- দিনটি তামিমেরই হবে। কিন্তু না দিনটি তামিমের হলো না। ব্যক্তিগত ৭ রানে বিদায় নেন তিনি।
তাতে কি, বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে যাবার ক্ষমতা তো দলের অন্য ব্যাটসম্যানের আছেই। তা করে দেখালেন সৌম্য সরকার। টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে না পারা সৌম্য, এ ম্যাচে দেখিয়েছেন দলের ড্যাশিং ওপেনারকে হারিয়ে কিভাবে রান চাকা সচল রাখতে হয়। তাকে সঙ্গ দেন আগের ম্যাচের হিরো সাব্বির রহমান। ধীর গতিতে হলেও, ৩৯ বলে মূল্যবান ৩৩ রান যোগ করেন সৌম্য ও সাব্বির।
মাত্র ১৪ রান করে সাব্বির ফিরে গেলেও, দমে যাননি সৌম্য। চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দ্রুত রান তুলেছেন সৌম্য। রানের গতি বাড়াতে চোখ ধাধাঁনো বেশ কিছু শটও খেলেন তিনি। তাতে টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতকের স্বাদ নেয়ার অপেক্ষায় প্রহন গুনতে থাকেন সৌম্য। কিন্তু ৪৮ রানেই থেমে যেতে সৌম্যকে। ৪৮ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন সৌম্য।
সৌম্য ফিরে যাবার ৫ রান পরই বিদায় নেন মুশফিকুর। ১৫ বলে ১২ রান করে লেগ বিফোর ফাঁেদ পড়েন তিনি। তার বিদায়ে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চিন্তা দূর করার দায়িত্বটা পড়ে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের।
দুর্দান্ত এক ছক্কায় নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েও দেন মাহমুদল্লাহ। কিন্তু অন্যপ্রান্তে অবাক করার মত হতাশ করেন সাকিব। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরকে স্কুপ করতে নিজের লেগ স্ট্যাম্পড হারান সাকিব। আউট হবার পর নিজের উপর যেভাবে হতাশা ঝেড়েছেন, তার চেয়ে বেশি হতাশার সাগরে ডুব দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিরা।
তবে বাংলাদেশকে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার উপলক্ষ তৈরি করেন মাশরাফি। সাকিবের বিদায়ে উইকেটটে গিয়েই পরপর দু’বলে বাউন্ডারি হাকান ম্যাশ। হতাশায় ডুব দেয়া বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলেন দলের দলনেতা। সাথে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহও।
শেষ দু’ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ১৮ রান। মোহাম্মদ সামির করা ১৯তম ওভার থেকে ১৫ রান তুলে বাংলাদেশের ম্যাচ জয় সময়ের ব্যাপার করে ফেলেন মাশরাফি-মাহমুদুল্লাহ।
সফরকারী পেসার আনোয়ার আলীর করা ২০তম ওভারের প্রথম বলকে ডিপ মিড-উইকেট দিয়ে চার মেরে বাংলাদেশকে জয়ের সাগরে ভাসিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ। সেই সাথে এশিয়ার কাপের ফাইনালে পৌছে যায় প্রিয় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ১৫ বলে ২২ রানে এবং মাশরাফি ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ২টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান : ১২৯/৭, ২০ ওভার (সরফরাজ ৫৮*, মালিক ৪১, আল-আমিন ৩/২৫)।
বাংলাদেশ : ১৩১/৫, ১৯.১ ওভার (সৌম্য ৪৮, মাহমুদুল্লাহ ২২*, সাব্বির ১৪, মাশরাফি ১২*, আমির ২/২৬)।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here