শ্রমিকদের জন্যও মজুরি কমিশন হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

0
342

পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটকে এখন থেকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাট উত্পাদন, বিপণন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানেও দেওয়া হবে। পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পাট খাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় মজুরি কমিশন গঠনেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীতে গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’-এর সফল বাস্তবায়নে সম্মাননা প্রদান এবং তিন দিনব্যপী বহুমুখী পাটজাত পণ্য মেলা-২০১৬-এর উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদেও স্বার্থরক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রক্ষার্থে সরকার শ্রমিকদেরও মজুরি বৃদ্ধির জন্য শিগগিরই মজুরি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে ভিক্ষা করে নয়, বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’ আমাদের যে সম্পদ আছে, তা কাজে লাগিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমাদের সোনালি আঁশ দেশের সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশের পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘যেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থে ভারতে নতুন নতুন পাটকল গড়ে তোলা হচ্ছিল, তখন সেই বিশ্বব্যাংকের টাকা খেয়েই বিএনপি এ দেশের পাটকলসহ শিল্প-কারখানা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সালে সংসদে পাটকল বন্ধের কথা তোলা হলে আওয়ামী লীগ এর তীব্র বিরোধিতা করে। ঠিক সেই সময়ই ভারত পাটশিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে পাটকল চালু করতে থাকে। কিন্তু সোনালি আঁশের দেশ হলেও আমাদের দেশে বন্ধ হতে থাকে পাটকলগুলো।’ তিনি আরো বলেন, ২০০২ সালের ৩০ জুন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি। এতে মিলের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।

বস্ত্র ও পাট খাতের গত কয়েক বছরের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পাটের এখন সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উত্পাদন করি।’ তিনি বলেন, ‘শুধু রপ্তানি নয়, আমাদের দেশের ভেতর যে বড় বাজার রয়েছে, সেটিকেই আমাদের ধরতে হবে। বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালু করায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লা খন্দকার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’-এর সফল বাস্তবায়নে ১৩টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ ৪১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) শহিদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালকের পক্ষে অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হুমায়ুন খালেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে পাটের ওপর ‘থিম সং’ এবং তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here