একাত্তরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের রায়ের রিভিউ আবেদন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়েছে। স্ত্রী খোন্দকার আয়েশা খাতুনের ওই লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আনা হয়েছে, তা কোনোভাবেই অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট নয়। যা মামলার যুক্তিতর্ক চলার সময় প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন মন্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়। সুতরাং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বক্তব্যে আরো বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রীর প্রকাশ্যে প্রধান বিচারপতিকে হুমকি, ধমকি এবং রায় প্রকাশের পূর্ব মুহূর্তে আদালত কর্তৃক বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আমাদের মনে একটাই প্রশ্নের জন্ম দেয়, যা সারা দেশের জনগণেরও প্রশ্ন বিচার বিভাগ কী আসলেই স্বাধীন? আমরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছি, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ আবেদন করবো। একাত্তরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা তার আপিল আবেদন আংশিক খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দেওয়া রায়-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লিখিত বক্তব্যে তা জানানো হবে বলে মীর কাসেম আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আটজনকে হত্যা-গণহত্যার দায় প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আপিল মামলার রায়ে। দেশের এ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন : বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তাই বর্তেছে তার ওপর।