বরিশালের সংখ্যালঘুপাড়ায় পুরুষ শুণ্য

0
292

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ যেকোন নির্বাচন আসলেই হামলা, মামলা, লুটপাট কিংবা দেশত্যাগের হুমকির আতংক ছড়িয়ে পরে জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে। অতীত নির্বাচনের ন্যায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি।
সূত্রমতে, শনিবার (৫মার্চ) রাতে জেলার গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের মহিষা গ্রামের ঋষি পাড়ার সংখ্যালঘু পরিবারের দুটি বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন নারীসহ পাঁচজন। এ ঘটনায় উল্টো ওই পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগের হুমকিসহ থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানীর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে আ’লীগ মনোনীত সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ফের হামলা ও পুলিশের গ্রেফতার আতংকে ওই পাড়ার পুরুষরা এখন আত্মগোপন করেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, মহিষা গ্রামের আ’লীগ কর্মী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রনো দাসের বিরুদ্ধে সরিকল ইউনিয়নে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন মিলনের নির্বাচনী ব্যানার লাগানোর মিথ্যে অযুহাত তোলেন আ’লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ অভিযোগে শনিবার বিকেলে সাকোকাঠী মিশুকস্টান্ডে বসে প্রকাশ্যে রনো দাসকে অমানুষিক নির্যাতন করে আ’লীগ প্রার্থীর কর্মীরা। রনো দাসের বৃদ্ধা মাতা মায়ারানী দাস অভিযোগ করে বলেন, শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী ফারুক মোল্লার পুত্র মামুন মোল্লার নেতৃত্বে তার সহযোগী নিক্সন মোল্লা, নাসির মোল্লাসহ ৩০/৩৫ জনে আমাদের বাড়িতে এসে আমার পুত্র রনো দাস, উত্তম দাস ও সুশীল দাসকে খুঁজতে থাকে। তাদের না পেয়ে উল্লেখিতরা আমাদের বসত ঘরে অর্তকিতভাবে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে লুটপাট চালায়। হামলাকারীরা আমার পুত্রবধূ সুমি রানী দাস, পুতুল রানী, সাগরী রানীকে বেধম মারধর করে আহতসহ শ্লীলতাহানী করে। তিনি আরও বলেন, হামলার সময় তাদের প্রতিবেশী ভুলু দাসের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছিলো। হামলাকারীরা বিয়ে বাড়িতে আসা মেহমানদেরকেও পিটিয়ে আহত করে। হামলাকারীরা আমাদের দেশত্যাগের হুমকি দিয়ে বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনার পর থেকে পুরো সংখ্যালঘুপাড়ার পুরুষ সদস্যরা পূর্ণরায় হামলার ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মায়ারানী দাস আরও অভিযোগ করেন, হামলার পর উল্টো নাসির মোল্লা বাদি হয়ে রবিবার (৬মার্চ) ৩৫ জনকে আসামি করে থানায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই মামলায় রহমান বিশ্বাস ও সজল বিশ্বাস নামের দু’জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সাথে রনো ঋষীর পূর্ব বিরোধের জেরধরে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়ে ধানের শীর্ষ প্রতীকের পোষ্টার লাগানোর মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সরিকল ইউনিয়নের নৌকা মার্কার প্রার্থী ফারুক মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ধানের শীর্ষের কর্মী আজিজ মোল্লার সাথে আমার সমর্থক নাসির মোল্লার বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে নাসির মোল্লাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। এ সময় রনো ঋষি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও সে কোন প্রতিবাদ না করায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা রনো ঋষির ওপর ক্ষিপ্ত হয়। উল্লেখ্য, ধানের শীর্ষের কর্মী আজিজ মোল্লা সরিকল ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মোল্লার ছোট ভাই।
অপরদিকে নলচিড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আ’লীগের বিদ্রোহী) যুবলীগ নেতা মীর মাসুদ উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্ধী নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা শনিবার দুপুরে নলচিড়া বাজারের তার আনারস মার্কার নির্বাচনী অফিস ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এসময় ভাংচুরের দৃশ্য ভিডিও করায় তার কর্মী রুবেল মন্ডলসহ চারজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। উল্টো নৌকা মার্কার কর্মী মোক্তার ফকির বাদি হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ ৫২ জনকে আসামি করে থানায় একটি মিথ্যে মামলা দায়ের করেন। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তার কর্মী সমর্থকেরা পুলিশের গ্রেফতার আতংকে এখন আত্মগোপন করেছেন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (আ’লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী উর্মিলা বাড়ৈ অভিযোগ করেন, নৌকা মার্কার প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা সংল্যালঘু সম্প্রদায়ের তার কর্মী সমর্থকদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার অপরাধে একই উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (আ’লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ তাজিম মোল্লা নিজহাতে মারধর করে আহত করেছেন শ্যাম সমদ্দার, কবির বিশ্বাসসহ চারজনকে। বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব ইয়াকুব আলীর মোরগ মার্কার সমর্থনে শনিবার বিকেলে নির্বাচনী প্রচার চলাকালে মাইক ভাংচুরসহ মারধর করে আহত করা হয় সুমন বিশ্বাসসহ দুইজনকে। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী কামাল হাওলাদার ও তার সমর্থকেরা বোয়ালিয়া এলাকায় এ তান্ডব চালায়। গৌরনদীর চাঁদশী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী কতিপয় ইউপি সদস্য প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব হামলা, মামলা ও দেশত্যাগের হুমকির মুখে জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা পুলিশ সুপার এস.এম আকতারুজ্জামান বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেশত্যাগের হুমকি দেয়ার ব্যাপারে আমার জানা ছিলোনা। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here