রানের পাহাড়ে চাপা খেয়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ

0
482

২৬ বছর পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা দুঃস্বপ্নের মতো হলো। ২০১ রান করে টাইগারদের রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েছিল পাকিস্তান। তাতে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন হার দিয়ে শুরু হলো মাশরাফির দলের। টানা ৫টি সীমিত ওভারের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর পর তাদের কাছে হারলো বাংলাদেশ। প্রতিশোধটা নির্মমভাবেই নিয়েছে পাকিস্তান। ৫৫ রানে হেরেছেন মাশরাফিরা। টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানের হার।    ২০০৭ প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেবার জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৬৫ রানের টার্গেট জয় করেছিল বাংলাদেশ। জিতেছিল ৬ উইকেটে। টি-টোয়েন্টিতে ওটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টার্গেট আর্জন করা জয়। ২০০’র ওপরে রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড টি-টোয়েন্টিতেই আছে মাত্র ৭টি। নতুন কোনো রেকর্ড গড়া হয়নি টাইগারদের। আহমেদ শেহজাদ (৫২) ও মোহাম্মদ হাফিজ (৬৪) করেছেন ফিফটি। ১৯ বলে ৪৯ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। তাতে ৫ উইকেটে ২০১ রান তোলে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। আর পাকিস্তানের দলগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ২০৩ রানও তারা ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিল। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলগত রান ১৯০। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৭৫। জিতলে রেকর্ড হতো। কিন্তু জেতার মতো অবস্থায় কখনোই ছিল না তারা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান অপরাজিত ছিলেন ফিফটি করে। ২০২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে তৃতীয় বলেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আমির বোল্ড করে দিয়েছেন সৌম্য সরকারকে (০)। সাব্বির রহমানের সাথে ইনফর্ম তামিম ইকবাল ৪৩ রানের জুটি গড়েছেন দ্রুতই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে আফ্রিদি তুলে নেন সাব্বিরের (২৫) উইকেট। তামিম তেড়েফুড়ে খেলার চেষ্টা করেছেন। দলের ৫৮ রানের সময় তিনিও আফ্রিদির শিকার। ২৪ রান করেছেন তামিম। তার আউটে ছন্দটা কেটে যায়। মাহমুদ উল্লাহ (৪) এসেই ফিরে গেলে বড় রানে হারের চোখ রাঙ্গানী দেখতে থাকে বাংলাদেশ। সাকিবের ৫০ উইকেট ও ১ হাজার রানের ডাবলের ক্লাবে ঢুকতে ৪ রান দরকার ছিল। আফ্রিদির পর এই অভিজাত ক্লাবের দ্বিতীয় সদস্য হয়েছেন তিনি। আসলে তামিমের বিদায়ের পর এই রান তাড়া করার কোনো মানে ছিল না। বাংলাদেশ চেষ্টা করে গেছে যথাসম্ভব বেশি রান করতে। এই বিশ্বকাপে নেট রান রেট একটা বড় ব্যাপার হবে। খুব বড় রানে না হারার টার্গেটেই পরে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। তাতে সাকিব তার ফর্মটা ফিরে পেলেন। হলো ষষ্ঠ ফিফটি। মুশফিকুর রহিম সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন। ২১ বলে ১৮ রান করেছেন। ষষ্ঠ ওভারে শুরু করে ৪০ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত থেকেছেন সাকিব। অধিনায়ক মাশরাফি ৯ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন ১৫ রানে। ব্যাট হাতে ৪৯ রানের পর বল হাতে ২৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ আফ্রিদি।   টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। তাদের ওপেনিং জুটি ভঙ্গুর। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে আল-আমিন হোসেনকে দুটি ছক্কা মেরে চমকে দিয়েছিলেন ওপেনার শারজিল খান। ওই ওভারে খরচ হয় ১৮ রান। এই বিশ্বকাপে স্পিন একটা ফ্যাক্টর হবেই। বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি প্রথম ওভারেই সেটা বোঝালেন। বোল্ড হয়ে ফিরেছেন শারজিল (১৮)। ২৬ রানে পাকিস্তান হারায় প্রথম উইকেট। সানি এই ম্যাচে খেলছেন পেসার আবু হায়দার রনির জায়গায়। মোহাম্মদ হাফিজ এসেই আক্রমণ করেছেন। আহমেদ শেহজাদ এশিয়া কাপে না থাকলেও সরাসরি বিশ্বকাপে ফিরেছেন। এই দুজন চমৎকার একটি জুটি গড়তে শুরু করেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে পাকিস্তান ১ উইকেটে ৫৫ রান তুলেছে। আইপিএলে ইডেন গার্ডেন্স সাকিব আল হাসানের ঘরের মাঠ। কিন্তু প্রথম ওভারে তাকেও দিতে হয়েছে ১১ রান। মাশরাফি নিজেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না এই জুটিকে। ১১.২ ওভারে এই জুটি গড়ে ৯৫ রান। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি করে আরো বড় কিছুর হুমকি দিচ্ছিলেন শেহজাদ। শেষ বিশ্বকাপে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু তাকে ৫২ রানে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেন লেগ স্পিনার সাব্বির রহমান। তুলে মেরে মাহমুদ উল্লার ক্যাচ হয়েছেন শেহজাদ। শহীদ আফ্রিদি নিজেকে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে নেমে গেলেন। এবং ঝড় তুলতে থাকলেন। তাতে ১৫ ও ১৬তম ওভারে মাশরাফি ও আল আমিনকে সমান ১৮ রান করে দিতে হলো। হাফিজ নিজের নবম ফিফটি তুলে নিয়ে আরো বিপদ বাড়াচ্ছিলেন। এই সময়ে সৌম্য সরকার অসাধারণ ক্যাচে হাফিজকে ৬৪ রানে ফিরিয়ে দেন। সানিকে তুলে মেরেছিলেন হাফিজ। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হওয়ার কথা। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে বাতাসে ভেসে বলটা ধরে ওপরে ছুড়ে দিয়ে বাইরে পড়েছিলেন সৌম্য। বল বাতাসে থাকতেই মাঠে ঢুকে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দু হাত বাড়িয়ে ক্যাচটাকে তালু বন্দী করেছেন। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা এক ক্যাচ এটি। ততক্ষণে মাত্র ১৭ বলেই আফ্রিদি-হাফিজ জুটি করেছেন ৪২ রান। দল ১৬৩ রানে। ৫ বল পরই তাসকিন আহমেদ তুলে নিয়েছেন উমর আকমলের (০) উইকেট। শেষ ওভারে আফ্রিদিকে শিকার করেছেন তাসকিন। কিন্তু ততক্ষণে সর্বনাশ যা করার করে ফেলেছেন আফ্রিদি। ১৯ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৪৯ রান করেছেন। শেষ ৫ ওভারে ৬২ রান করেছে পাকিস্তান। ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৯০ রান করেছিল তারা। জিতেছিল ৫০ রানে। এই ম্যাচে ৩ ওভারে আল আমিন ৪৩ রান দিয়েছেন। ৩ ওভারে মাশরাফি দিয়েছেন ৪১ রান। সানি ৪ ওভারে ৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন ৪ ওভারে ৩২ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন। ৪ ওভারে সাকিবের খরচ ৩৯ রান। এমন একটা ম্যাচ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here