প্রস্তুতি শেষ, এখন ম্যাচে নামার সময়। ম্যাচে নেমেও গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)! তাসকিন আহমেদের ওপর আরোপিত বোলিং নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত রিভিউর (পুনর্বিবেচনা) জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বরাবর আবেদন করেছে বিসিবি। সরকারিভাবে পুনর্বিবেচনার আবেদন হলেও কার্যকারণে যা চ্যালেঞ্জই। হ্যাঁ, তাসকিনের ব্যাপারে আইসিসির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জই জানিয়েছে বিসিবি। অবশ্য অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হলে সংশ্লিষ্ট বোলার এবং তাঁর বোর্ডের সামনে একাধিক পথ খোলা থাকে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে বোলিং অ্যাকশন শুধরে পুনরায় পরীক্ষায় বসার অনুমতি চাওয়া হয়। এরপর পরীক্ষায় পাস করলে মেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ের অধিকার। কিন্তু অভিযুক্ত বোলার এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ড যদি মনে করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় ভুল আছে, তাহলে রিভিউর সুযোগ রয়েছে আইসিসির আইনে। সেই পথে হাঁটার কথাই গতকাল জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, ‘নিয়মের মধ্যে যে সুযোগ আছে, সেটা কাজে লাগাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আজকের (গতকাল) মধ্যেই রিভিউ নোটিশ পাঠানো হবে।’ সেই মতে গতকাল সেটি পাঠিয়েও দিয়েছে বিসিবি। এখন প্রশ্ন, এ ‘চ্যালেঞ্জ’ নিষ্পত্তি হতে কত দিন লাগবে? নিজাম উদ্দিন সরাসরি না বললেও আইসিসির বিধানে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আইসিসি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে সুপার টেন ম্যাচেও দেখা যেতে পারে তাসকিনকে। সত্যিই কি তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে? অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় বিসিবির কর্মকর্তাদের কেউই এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে তাসকিন বোলিংয়ের ছাড়পত্র পাবেই—এমন একটি আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে দেশীয় ক্রিকেট প্রশাসক মহলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের দাবি, ‘আগের দিন বোর্ডপ্রধান আপত্তির কথা জানাতেই আইনি পরামর্শকদের সঙ্গে সভা করেছে আইসিসি। তাতেই বোঝা যায় আইসিসিও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছে। ভুলটা সম্ভবত তারাও বুঝতে পেরেছে। ভুল বুঝতে না পারলে কেউ কি আর আইনজ্ঞদের নিয়ে বসে!’ আইসিসির ভুলের সারাংশ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে মিডিয়ায়। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে একটাও বাউন্সার দেননি তাসকিন আহমেদ। অথচ বাউন্সার দেওয়ার সময় কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বেঁকে যায় বলে তরুণ এ পেসারের বোলিং নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি! শুধু তা-ই নয়, নিজের আইনের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে অন্য একটি কারণেও। ৯ মার্চের ম্যাচের পর তাসকিনের বোলিংয়ের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাঠের আম্পায়ার। আইসিসির রীতি অনুযায়ী সে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ম্যাচের ফুটেজ দেখেই তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা নিশ্চিত হওয়ার কথা। চেন্নাইয়ের ল্যাবে ওই ম্যাচে করা তাসকিনের প্রতিটা বল বৈধ হওয়ার পরও কেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা অভিযোগ করলেন—রিভিউ নোটিশে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে এ প্রশ্নটিও জুড়ে দিয়েছে বিসিবি। ম্যাচ পরিস্থিতি যা, তাতে বিসিবির জয় অনিবার্য। তবু চূড়ান্ত রায় দেওয়ার ক্ষমতা তো শেষমেশ বিসিবির রিভিউর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত আইসিসির ‘বোলিং রিভিউ গ্রুপ’-এর হাতে, যেটি আবার গঠন করবে আইসিসিই। নিজেদের ভুল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বীকার করে ফেলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এমনিতেই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ আইসিসির ভাবমূর্তি আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে তাতে। তাসকিন ইস্যুতে বিসিবির অন্দরমহলের সামান্যতম যে দুশ্চিন্তা, তা এ যুক্তিতেই। আইসিসি কি আর নিজের ভুল স্বীকার করবে? তা ছাড়া রিভিউ আবেদনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য-প্রমাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভোট। কারণ বোলিং রিভিউ গ্রুপ (বিআরজি) গঠন করবে আইসিসিই। এর প্রধান হবেন আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট কমিটির একজন সদস্য, যাঁর কাস্টিং ভোট রয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হবেন সাবেক একজন ক্রিকেটার, একজন ম্যাচ রেফারি, একজন হিউম্যান মুভমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার। সব সদস্যই মনোনয়ন করবেন বিআরজির প্রধান। ভোটাভুটির বেলায় তো এ কমিটির আইসিসির পক্ষই নেওয়ার কথা। সে আশঙ্কা বিসিবিরও আছে। তবে আইসিসিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর একটা তৃপ্তিও আছে সঙ্গে। ‘তাসকিনের ব্যাপারটি বিস্ময়কর, আইসিসি এ ভুলটা করল কী করে! ওরা কি ভেবেছিল যে আমরা চুপচাপ সব মেনে নেব’, অনুকূল পরিস্থিতিতে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী বিসিবির ওই কর্মকর্তার কণ্ঠস্বর। আরো জোরালো আশাবাদ তাঁর তাসকিনকে ঘিরে, ‘অনেকগুলো ইস্যু আছে আমাদের পক্ষে। এটা না জেতার কারণ দেখছি না। তাসকিন আবার খেলবে। কবে, শুধু সেটা এখনই বলতে পারছি না।’ তবে বলা যাচ্ছে আইসিসির বোর্ডরুমেও এরপর থেকে নিয়মিত ‘খেলবে’ বিসিবি। তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ‘রিভিউ’ ডেকে সে ঘোষণাই যেন দিল বিসিবি!