৩ বল, দরকার ২ রান। ১ রান হলেও ম্যাচ চলে যায় সুপার ওভারে। টানা দুটি চার ম্যাচ বাংলাদেশের মুঠোয়। পরিস্থিতি এমন—এই ম্যাচ ভারতের জেতার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার সুযোগ তো আছেই!
নামটা মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রচুর ম্যাচ বের করে নিয়েছেন। আইপিএলের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। ধোনি যেন প্রত্যেকটা বলের জন্যই নতুন করে ছক কষছিলেন। কাল তো সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নও উঠল, শেষ ওভারটা করতে ভারত আসলে কত মিনিট সময় নিয়েছে? এর জন্য আলাদা করে জরিমানা দিতে হবে না তো?
ম্যাচের যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে ধোনি চাইলে কয়েক কোটি রুপিও জরিমানা দিতে প্রস্তুত ছিলেন নিশ্চিত। টি-টোয়েন্টি ঝোড়ো গতির খেলা, তার সঙ্গে যদি যুক্ত এমন এমন মানসিক চাপ, মাথা ঠান্ডা রাখাই কঠিন। এত দ্রুত এখানে প্রতি মুহূর্তে ম্যাচের ছবি বদলায়। প্রতি মুহূর্তে রণকৌশলও তাই বদলাতে হয় পাল্লা দিয়ে। এখানেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। অন্তত শেষ বলেও তো সুযোগ ছিল। কোনোমতে একটা রান নিতে পারলেও সুপার ওভারে চলে যেত ম্যাচ।
অথচ বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হলো, শেষ বলটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। তরুণ মুস্তাফিজকে কেউ তেমন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বলেও মনে হলো না, মুস্তাফিজ দৌড়টাই শুরু করলেন অনেক পরে। ধোনি কিন্তু জানালেন, শেষের বলটার জন্যই শুধু ছক কষে রেখেছিলেন আলাদা করে।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তো আর গোপন কৌশল ফাঁস করে দিতে অসুবিধা নেই। ধোনি জানিয়েছে, শেষ বলটার জন্য পান্ডিয়াকে বলা হয়েছিল যেন এটা ইয়র্কার না হয়। ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফুলটস হয়েছে আগের দুই বলে, যদিও সেই দুই বলেই উইকেট পেয়েছিল ভারত। অফ স্টাম্পের বাইরে কিছুটা খাটো লেংথে বল করতে বলে দিয়েছিলেন ধোনি। তবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বল যেন বেশি শর্ট পিচ না হয়, আবার খুব বেশি বাইরেও যেন না যায়। অধিনায়কের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন তরুণ পান্ডিয়া।
ধোনি বলেছেন, ‘এটা কিছুটা খাটো লেংথে করতেই হতো, কিন্তু ঠিক কোন লেংথে, এটাই ছিল প্রশ্ন। আপনি নিশ্চয়ই একটা ওয়াইড দিতে চাইবেন না, যে সময় বলটা কিপারের কাছে পৌঁছাত, ততক্ষণে ব্যাটসম্যানরা এক রান নিয়েও নিতে পারত। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম ফিল্ডিং পজিশন কী হবে, আর বলের লেংথটা কী হবে। সেই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছি। আপনি হাজারটা পরিকল্পনা করতে পারেন, কিন্তু বাস্তবায়ন যদি ভালো না হয়, সেই পরিকল্পনাকেও ভালো মনে হবে না। শেষ বলে আমরা পরিকল্পনাটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছি।’
প্রায় দশ বছর ধরে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব করছেন। ধোনি আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট—দুইয়ের সাফল্যই পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে। এমনকি শেষ ওভারটায় যে এত সময় নিচ্ছিলেন বারবার, এখানেও ধোনির অভিজ্ঞতাই এগিয়ে দিয়েছে। এমনিতে স্লো ওভার রেটের নিয়মটা এখন অনেক কড়াকড়ি করা হলেও ধোনির মাথায় এটিও ছিল, ‘আমি জানতাম, একবার ২০তম ওভারটা শুরু করে দিতে পারলে আপনি যত খুশি সময় নিতে পারবেন। এই বাড়তি সময় নেওয়ার জন্য আর আপনাকে জরিমানা দিতে হবে না।’