জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে একটু সচেতনাই পারে ত্বকের যেকোনো সমস্যা থেকে আমাদের দূরে রাখতে : ডা. ঝুমু খান

0
544

সৌন্দর্য্য সচেতন মানুষের কাছে চেহারায় বয়সের ছাপ এক অস্বস্থিকর সমস্যা। আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে অবিরাম ছুটে চলা, নানাবিধ দুঃচিন্তা তথা মানসিক চাপ, কড়া রোদ ইত্যাদির প্রভাবে চোখের তলায় ভাঁজ, ত্বক ঝুলে যাওয়া ও বলিরেখা দেখা দেয়। আমাদের ত্বক হয়ে যায় নির্জীব। আর এসবের ফলে বয়সের তুলনায় নিজেকে দেখায় আরো বেশি বয়সী। যাকে আমরা বয়সের ছাপ বা এজিং বলি। ত্বক মানুষের শরীরের স্পর্শকাতর অংশ। তাই ত্বকের প্রতি আমাদের প্রতিনিয়তই সচেতন থাকা উচিত। ত্বকের যেকোনো সমস্যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ত্বক বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. ঝুমু  খান জানান, দৈনন্দিন জীবনের কিছু বদঅভ্যাস ও অসচেতনার কারণেই বয়সের আগে বুড়িয়ে যেতে পারে আপনার চেহারা। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোদের ক্ষতিকর প্রভাবকে অবহেলা করা। ত্বকের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে রোদ। সারাদিন বাইরে রোদের মধ্যে থাকলে, ইউভি রশ্মি থেকে ত্বকের সেল ড্যামেজ হয়। বয়সের ছাপ বা এজিংয়ের অন্যতম কারণ এই সেল ড্যামেজ। এর ফলে ত্বকের বিভিন্ন স্তর, বিশেষ করে সাপোর্টিভ লেয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ধূমপান বয়সের ছাপের আরেকটি কারণ। যাদের ধূমপানের অভ্যাস আছে তাদের ত্বকে দ্রুত বলিরেখা পড়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেরই রয়েছে মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি বেশ দুর্বলতা। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এতে ত্বকে দ্রুত বলিরেখা পড়ে যায়।
তিনি বলেন, চিন্তা ছাড়া মানুষ হয় না, নূন্যতম চিন্তা সবারই থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকের ক্ষতি করে। এর প্রভাবেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে অনেকের। টিনজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশী খেলেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে। কারণ, এসব খাবার সংরক্ষণের বিভিন্ন রকম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এসব ছাড়াও রয়েছে অতিরিক্ত চুইংগাম খাওয়া, মেকআপ করার পর সেটা ঠিকমতো না তোলা, গালে ভর দিয়ে ঘুমানো, ত্বক টানা, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি।
ডা. খানের মতে, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে একটু সচেতনাই পারে এধরণের সমস্যা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখতে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। তবে এটা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার আগেই শুরু করা উচিত। ত্বককে ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্বল এবং উজ্জ্বল করার জন্য প্রয়োজন ভালো ডায়েট এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। কিছু মিনারেল এবং ভিটামিন ভেতর থেকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্বল ত্বক এনে দিতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়: ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরী, লেবু, কমলা, আনার, খেজুর, কাজুবাদাম, দুধ, গাজর, মিষ্টি কুমড়ো, পালং শাক, মাশরুম ইত্যাদি। এসব খাদ্যে রয়েছে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি উপাদান- ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারটিন ও আয়রন। এসব খাবার খাওয়ার পাশাপাশি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে, ব্যবহার করতে হবে ছাতা। বাইরে থেকে ফিরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং ঘুমানোর সময় গালে ভরদিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ধুমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান। এসব বিষয়ে আমাদের একটু সতর্কতাই ও সচেতনা আমাদেরকে দিতে পারে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের নিশ্চয়তা।
ঝুমু  খান আরো বলেন, সুন্দর ত্বক পাওয়ার জন্য আমরা কত না নামীদামী ক্রিম ও ফেসপ্যাক ব্যবহার করি। বাজারের ক্রিম বা লোশন সাময়িকভাবে ত্বক উজ্জ্বল করে ঠিকই তবে, এগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদী ফল লাভ করা সম্ভব নয়। ফলে, বাজারের বিভিন্ন ধরণের ঔষধ ও প্রসাধনী ব্যবহার করেও যাদের ত্বকে ইতিমধ্যে এজিং বা বয়সের ছাপ পড়ে গেছে স্থায়ীভাবে বয়সের ছাপ দূর করতে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রায়ই হতাশ হন। দোকানে এসব প্রসাধন ও বিভিন্ন ঔষধ ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে ধীর করতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু বিদ্যমান দাগ দূর করতে পারে না। আর বেশির ভাগ সামগ্রীতেই রাসায়নিক পদার্থ থাকে এবং যা ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর। এছাড়া, এসব প্রসাধনির রয়েছে অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বয়সের ছাপ নিয়ে হতাশার কিছুই নেই। কারণ, বর্তমানে এ থেকে মুক্তিলাভ আর অসম্ভব ব্যাপার নয়। দেশেই এখন পাওয়া যাচ্ছে বয়সের ছাপ দূর করার অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা। আমাদের দেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লেজার ট্রিটমেন্টে উন্নতি লাভ করেছে। বয়সের ছাপ দূর করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে অনেক রকমের অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তার নিজেরও রয়েছে ‘ডা. ঝুমু খান’স লেজার মেডিক্যাল’। এই সেন্টারটির রয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এধরণের সেবাদানের অভিজ্ঞতা। এ প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞদের রয়েছে ডার্মাটোলজি সনদ। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট: http://www.lasermedicalbd.com থেকে আরো বিস্তারিত জানা যেতে পারে। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো লেজার চিকিৎসায় বেশ উন্নতি লাভ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পরামর্শকদের পরামর্শ নিয়ে সহজেই এজিং সমস্যা দূর করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here