চলে গেলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন। আজ সোমবার (৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৮টায় রাজধানীর উত্তরায় আধুনিক হাসপাতালে মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। এখানেই দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন খোকন। তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। মুখগহ্বরের মোটর নিউরন ডিজিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালে খোকনকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছিল। এই রোগের চিকিৎসা নেই বলে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে খোকন তিন সন্তানের জনক। তাঁরা উত্তরায় থাকেন। আজ সোমবার বাদ জোহর এফডিসিতে খোকনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাকে শ্রদ্ধা জানাবেন চলচ্চিত্রের শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। খোকনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও পরিবেশক এবং শিল্পীসমিতি। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি।
খোকন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অন্যতম গুণী ও মেধাবী নির্মাতা ছিলেন। পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অভিনয় করলেও চলচ্চিত্র নির্মাণই ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ। কাজের মধ্য দিয়ে তার প্রমাণও রেখে গেছেন তিনি। অভিনেতা ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজের (সোহেল রানা) সহকারী হিসেবে খোকনের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয়েছিল। দশ বছর ধরে তিনি সোহেল রানার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
রক্তের বন্দী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খোকন তাঁর পরিচালনার অধ্যায় শুরু করেন। কিন্তু ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পায়নি। খোকনের পরিচালনায় নির্মিত দ্বিতীয় ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। পরে রুবেলকে নিয়ে খোকন তৈরি করেন লড়াকু। এই ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা পায়। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মার্শাল আর্টভিত্তিক এবং অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করে খোকন বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নতুন মুখ হাজির করেন। তাঁদের মধ্যে ড্যানি সিডাক, সিরাজ পান্না, ইলিয়াস কোবরা, হুমায়ুন ফরীদি অন্যতম। সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং সমাজবিরোধী শক্তির অপচেষ্টাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন খোকন।
১৯৯২ সালে উত্থান পতন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন খোকন। পরবর্তী সময়ে পরিচালনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করলে আর অভিনয়ে ফিরে যাওয়া হয়নি তাঁর। শহিদুল ইসলাম সাচ্চু পরিচালিত মেগাবন্ড, সৌরজয় চৌধুরী পরিচালিত অবশেষে নাটকে পরিণত হলো নাটকে অভিনয় করেন খোকন। খোকন পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি ঘাতক, পালাবি কোথায়, লাল সবুজ, ম্যাডাম ফুলি, ভণ্ড, লড়াকু, বীরপুরুষ, বজ্রমুষ্টি, বিপ্লব, অকর্মা, সতর্ক শয়তান, বিষদাঁত, টপ রংবাজ, উত্থান পতন ইত্যাদি।