এ বি এম সাইদুর রহমান নাজু :
জাতীয় সম্মেলনে অনুমোদনের পর বিএনপিতে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কার্যকর হতে চলেছে। ফলে জেলা কমিটিতে থেকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন যারা, তাদেরকে বেছে নিতে হবে যে কোনোও একটি পদ। একইভাবে সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে থেকেও আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার সুযোগ আর থাকছে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে নেতৃত্বের কোন্দল কোনও নতুন ঘটনা নয়। কমিটিতে স্থান পেতে দলের ভেতর দ্বন্দ্ব-সংঘাত কখনও প্রকাশ্যে কখনও বা গোপনে। ফলে দলের কর্মসূচি বা নির্বাচনে নিস্ক্রিয় থাকে একাংশ, কখনও বা ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ প্রাণহানি।
বিএনপিতে একই নেতার একাধিক পদে তাকার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হলেও এতোদিন বিষয়টি পাত্তা দিতেন না কেন্দ্রীয় নেতারাও। ফলে দেখা গেছে দলের স্থায়ী বা নির্বাহী পরিষদের নেতারাও মহানগর বা জেলা কমিটির পদ দখল করে বসে আছেন। একইভাবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন পরিচালনাও করতে হয়েছে একাধিক নেতাদেরকে। একই সঙ্গে দুটো সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় একদিকে যেমন তার নিজের ওপর চাপ বাড়ে, তেমনি সংগঠন পরিচালনায় দেখা দেয় ব্যাঘাত। আবার নতুন নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে তা।
এসব সমস্যার কারণে দলের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেরনে নিরুৎসাহিত করার বদলে এক নেতার একাধিক পদে থাকার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফরে নতুন নির্বাহি কমিটিতে প্রায় অর্ধশত নেতাকে জেলা ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্ব হারাতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে একাধিক পদে আছেন এমন নেতারা ভেতরে নাখোশ হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। তারা বলছেন, নতুন এই নীতি বাস্তবায়ন হলে মাঠের নেতারা তৃণমূলেল নেতৃত্ব পাবেন। ফলে সাংগঠনিকভাবেও দল শক্তিশালী হবে। এক নেতার এক পদের বিষয়টি কার্যকরের ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়, এখন থেকে থানা ও জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অন্য কমিটিতে থাকতে পারবেন না। আবার স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদে যারা থাকবেন, তারাও অন্য কোনো পদে পাবেন না। তবে প্রয়োজনবোধে চেয়ারপারসন কাউকে সাময়িক সময়ের জন্য একাধিক পদ দিতে পারবেন।
জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, ‘এক নেতার এক পদের নীতি বাস্তবায়নের ঘোষনায় আমরা পুরোপুশি খুশি। আশা করি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দলে নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি হবে।’
তবে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক সোহরাব হোসেন মনে করেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়ে গেলে তা দলের জন্য ভালো হবে।
একাধিক পদ হারাচ্ছে যারা!
নতুন নতীতি কার্যকর হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী এমনকি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদর বেশিরভাগ নেতাকেই বেছে নিতে হবে যে কোনো একটি পদ। কারণ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন, এমনকি জেলা কমিটির পদও দখল করে আছেন তারা। এর মধ্যে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল আছেন তিনটি দায়িত্বে। এদিকে দলের মহাসচিব পদ রেখে ইতোমধ্যে কৃষক দল ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ত্যাগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়। এই পদ পাওয়ার পরও তিনি দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদ ছাড়েননি। একই সঙ্গে তিনি বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক।
একাধিক পদ হারাবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেও ছাড়তে হবে ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির পদ। সহসভাপতির মধ্যে যে কোনও একটি পদ ছাড়তে হবে আলতা হোসেন চৌধুরীকে। তিনি পটুয়াখালী জেলা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুও। ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের পদেও আছেন এই নেতা। একইভাবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পাশাপাশি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি, শামসুজ্জামান দুদু কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ জেলার সভাপতি, আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি, এমএ মান্নান ঢাকা জেলার সভাপতি ও মাজিদুল ইসলাম খুলনা জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন।
যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মোহাম্মদ শাজাহান নোয়াখালী জেলার সভাপতি। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলার সভাপতি, বরিশালের মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগরের সভাপতি, খুলনার মসিউর রহমান ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি ও রংপুরের আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলার সভাপতি পদে রয়েছেন। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর বিএনপিরও সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহ্বায়ক।
এছাড়াও বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকেরা স্থানীয় বিভিন্ন পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে থাকা নেতাদের মধ্যে বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা রাজশাহী জেলা সভাপতি, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক নোয়াখালীর সেবনাগ উপজেলার সভাপতি। যুবদলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসনে আলাল বিএনপির যুব-বিষয়ক সম্পাদকও। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বিএনপির স্বনির্ভর বিষযক সম্পাদকের পাশাপাশি নাটোর জেলার সভাপতিও। শিক্ষবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলার সভাপতি। এর বাইরে বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য।
বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি। স্থানীয় সরকার বিষয়ক সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি। শিল্প ভিসক সম্পাদক একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি। সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। সহ-শিল্প বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর জেলার সভাপতি। সহপল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলার সভাপতি। সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি। কেন্দ্রীয় সহ-কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আমির-উর রশীদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক। সহ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। একইভাবে বিএনপির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমএ মালেক বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস সভাপতি। সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা মহিলা দলের সভানেত্রী। সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা।
আবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বগুড়া জেলার সভাপতি, আফরোজা আক্তার খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি, এম নাছের রহমা মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি, জি কে গউছ হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক। আনোয়ার হোসাইন শ্রমিক দলের সভাপতি, শফিকুর রহমান কিরণ শরীয়তপুর জেলার সভাপতি, আশিফা আশরাফি পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারন সম্পাদক, কাজী সাইয়েদল আলম বাবুল গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ মোদারেছ আলী ইসা ফরিদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক, ওয়ারেছ আলী মামুন জামালপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ুন কবির খান তাঁতীদলের সভাপতি, রফিকুল ইসলাম মাহতাব মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, মীর সরফত আলী সপু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক, মনির খান জাসাস সাধারণ সম্পাদক, শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল সাংগঠনিক সম্পাদক, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল পিরোজপুর জেলা সভাপতি, আলমগীর হোসেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বরিশাল উত্তর জেলা সভাপতি ও আকন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল উত্তর জেলা সাধারণ পদে রয়েছেন।