আগামীকাল বুধবার চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলা ১৪২২ সালের শেষ দিন।
কবির ভাষায়-‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি…।’ মহাকালের অতল গর্ভে কাল হারিয়ে যাবে আরও একটি বাংলা বছর।
আগামীকাল সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ী বছরের সমস্ত চাওয়া পাওয়া, হতাশা ও অপ্রাপ্তির সাঙ্গ হবে। তবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি জাতি বিভিন্ন চাওয়ার সাথে বছরের শেষ দিনেও একটি দাবিতে থাকবে অনড়, আর তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দ্রুত তা সম্পন্নের।
বাঙালির আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্য ও গৌরবময় ইতিহাস থেকে কলঙ্কের এ কালিমা চিরতরে মুছে ফেলার জন্য সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত দাবিটি শুধু বর্ষবিদায়েই নয়, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানেও পাবে ভিন্ন মাত্রা।
জাতীয় জীবনে ১৪২২ সালে দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, কূটনেতিক, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারী কাজের সফলতায় দেশে উন্নয়ন ঘটে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল বলে চিহ্নিত করে থাকে। আগামী বছরটাও এমনই সম্ভাবনাময় হয়ে থাকুক, বাঙালির তেমনি থাকবে প্রত্যাশা। বিভিন্ন দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এমন প্রত্যাশা কামনা করে আগামীকাল পালন করবে চৈক্রসংক্রান্তির উৎসব।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার চৈত্রসংক্রান্তি প্রসঙ্গে বলেন, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবটি নানা পুজো অর্চনার মধ্যদিয়ে পালন করে থাকেন। সূর্যের কৃপা প্রার্থনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষককুল পুরো চৈত্রমাস জুড়েই পালন করে প্রার্থনা উৎসব। হিন্দু ব্যবসায়ীরা আয়োজন করে চড়ক পুজোর।
তিনি বলেন, চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে লোকমেলার আয়োজন গ্রাম-গঞ্জেই বেশি হয়। মেলা, গান-বাজনা, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজ সংস্কৃতির নানা সম্ভার। অনেক জায়গায় ইতোমধ্যে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা বসে গেছে। সে দিক থেকে শহরাঞ্চলে চৈত্রসংক্রান্তির চিরন্তন আবেদন বলতে গেলে তেমন নেই, গান-বাজনার কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া।
চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান:
প্রতি বছরের মত এবারও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আগামীকাল জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় চৈত্রসংক্রান্তির বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষবিদায়ের সূচনা সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বর্ষবিদায়ের শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেবেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। থাকবে শিল্পী শাহাদাৎ হোসেন খানের সেতারবাদন। অনুষ্ঠানে নাটকের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন গান। আলোচনা ও গানের ফাঁকে ফাঁকে চলবে আবৃত্তি। এছাড়া বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শুকনো খাবার মুড়িÑমুরকীর আয়োজনও রেখেছে ফেডারেশন।
বর্ষবিদায় উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের আয়োজন করেছে সুরের ধারা। আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠানটি চলবে রাত ১২টা ১ মিনিট পর্যন্ত। চ্যানেল আই পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। সবার জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান রয়েছেন সুরের ধারার রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে বাংলা বছর ১৪২২ সালকে বিদায় ও ১৪২৩ সালকে স্বাগত জানাতে গতকাল সোমবার থেকে দু’দিনব্যাপী ‘চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব’ এর আয়োজন করা হয়েছে। আজ এ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান, চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। উৎসবে নাচ, গান, আবৃত্তির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পদের পিঠা ও মৃৎপণ্য সামগ্রীর স্টল সাজিয়ে বসেছে।