বরিশাল প্রতিনিধি ॥ বাংলা নতুন বছর ১৪২৩-কে স্বাগত জানাতে বরিশালে নানান আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা-মেলাসহ বর্ষবরণের নানান অনুষ্ঠানকে রঙিন করে রাঙিয়ে তুলতে সংস্কৃতি শিল্পীরা গত একমাস ধরে মহাব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের সবার মধ্যেই বর্ষবরণের উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী কৃর্তক পান্তা-ইলিশ নিয়ে নানান যৌক্তিকতার পর পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন ইলিশ ছাড়াই বর্ষবরণ উৎসব পালন করার ঘোষণা দেয়ায় অনেকেই পান্তা-ইলিশ ছাড়া অন্যান্য আইটেম দিয়ে বর্ষবরণের আয়োজন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পান্তা-ইলিশের পক্ষে বিপক্ষে চলছে অনেক লেখালেখি ও আলোচনা সমালোচনা। বাংলা বছরের প্রথম দিনটি বরণে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নগরীতে এবারে পৃথকভাবে চারুকলা, উদীচী, জেলা প্রশাসন ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শোভাযাত্রা বের করবেন। ছাত্রছাত্রী ও সংস্কৃতি কর্মীরা তৈরি করেছেন বৃহৎ আকারের বাঘ, কুমির, কাক, শাপলা ফুলসহ বাঙালি লোকজ ও দৈনন্দিন জীবনের নানা মোটিভ। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিপুণ হাতের ছোয়ায় তৈরি হয়েছে-রাখি, মুকুট, ফুলসহ নানান শিল্প সামগ্রী। বাংলা নববর্ষকে বরণ উৎসবে বরিশাল চারুকলার আয়োজনে এবার ২৪তম মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সকাল সাতটায় মঙ্গল গান, নৃত্য, মুক্তিযোদ্ধা, গুণীজন সম্মাননা ও রাখি উৎসবের মাধ্যমে এ আয়োজনের শুভ সূচনা হবে। নগরীর ভাষা সৈনিক ইউসুফ কালু শিশুদের হাতে রাখি পরিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন করবেন। শোভাযাত্রা শেষে বরিশাল সিটি কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হবে গণচিত্রাঙ্কন ও যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগিতা।
এদিকে শোভাযাত্রায় মুখোশ ও ভুভুজেলা বাঁশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন পোশাক বা শ্লোগান দেয়া ও শোভাযাত্রার ঐতিহ্যের সাথে মানানসই নয় এমন আচরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উদীচী বরিশাল ইউনিটের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো বিএম স্কুল প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি সকালে স্কুল প্রাঙ্গণে শুরু হবে বৈশাখী উৎসব। যা চলবে তিন দিনব্যাপী। পহেলা বৈশাখের সকালে উৎসবের উদ্বোধণের পরপরই উদীচীর আয়োজনে নগরীতে একটি শোভাযাত্রা বের করা হবে। এছাড়াও বরিশালের জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হবে। অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে কর্ণকাঠীস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। ক্যাম্পাসে মেলার আয়োজনসহ বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি দুর্গাসাগর দিঘীর পাড়ে বৈশাখের দিনে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার।
বৈশাখে অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজন করা হয়েছে লোকগীতি ও নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়া বরিশালের বিভিন্ন উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্নস্থানে ছোট-ছোট বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী উৎসবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নগরীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। সিসিটিভি, ক্যামেরা দ্বারা শোভাযাত্রা ও বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলোতে নজরদারিও করা হবে।