বেনাপোল প্রতিনিধি :
যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন-সাতক্ষীরা মোড়ে প্রতিদিন সূর্য উদয়ের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে এ শ্রম বাজার। প্রতিবছর ধান কাটা, বাঁধা, মাড়াই ও রোপনের সময় এখানে বসে কৃষক মজুরের এই হাট, চলে পুরো ধানের মৌসুম জুড়ে।
এখানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি, দেবহাটা, তালা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন ক্ষেতমজুর। স্থানীয়ভাবে এই হাটের শ্রমজীবীরা ‘দক্ষিণের জোন’ নামে পরিচিত। তারা বয়সে কেউ কিশোর, কেউ যুবক অথবা বৃদ্ধ। সবার চোখে প্রতীক্ষা ক্রেতার জন্য। ক্রেতা মিললে চলে দর কষাকষি, বনিবনা হলে জুটে যায় কাজ।
এই দিনমজুররা বিঘা প্রতি ধান কাটা, বাঁধা ও মাড়াইসহ যাবতীয় কাজের জন্য পান ৩ হাজার থেকে ৩৮শ টাকা পর্যন্ত।
তবে প্রতিদিনের ন্যায় সব মহাজনের মেলে না শ্রমিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থেকেও যদি শ্রমিক না মেলে ফিরে যেতে হয় খালি হাতেই। পরদিন আবার আসেন তারা।
শ্রমিক কিনতে আসা ডিহি ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বলেন, গত তিন দিন ধরে শ্রমিক কিনতে আসছি কিন্তু মিলছে না শ্রমিক। প্রতি বিঘায় তিন হাজার টাকা দাম চললেও চার হাজার টাকা দিলেও মিলছে না শ্রমিক।
শ্যামনগরে বাসিন্দা নাভারন ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের শিক্ষক কার্তিক চঁন্দ্র মজুমদার বলেন, “সাতক্ষীরায় মাছ চাষ বেশি হওয়ায় এই সময় ওখানে কৃষি শ্রমিকদের কাজ থাকে না। অল্প সময়ে বেশি উপার্জনের আশায় এসব দিনমজুর এখানে কাজ করতে আসেন।”
চলতি মৌসুমে শার্শা উপজেলায় ২১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ থেকে ধান তোলায় ব্যস্ত এখানকার জমি মালিকরা। একই সঙ্গে সবাই ধান তোলা শুর করায় উপজেলার সর্বত্র ব্যাপকভাবে কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। ‘দক্ষিণের জোন’ খ্যাত বাইরের এই শ্রমিকরা আসায় সেই অভাব অনেকটা পূরণ হচ্ছে বলে জানান হীরক কুমার।
বেনাপোলের কামাল হোসেন পনেরো বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান আবাদ করেছেন, নাভারন-সাতক্ষীরা মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কখন ঝড়বৃষ্টি হবে তাই ধান তোলা নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। দেবহাটা থেকে আসা মিজানের দলে পাঁচ সদস্যের একটি দলকে ধান কাটার জন্য বাজার থেকে নিয়ে এসেছি। মহাজনরা তিনবেলা খাওয়াসহ প্রতিবিঘা জমির ধান কাটা, বাঁধা ও মাড়াইসহ যাবতীয় কাজের জন্য তিন হাজার টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না; আর শ্রমিকরা হাকছেন ৩৫শত টাকা।
কালিগঞ্জের রতনপুর গ্রামের দশজনের দলনেতা মোমেন আলি বলেন, আমাদের কাজ করতি হয় সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত। পরিশ্রমের তুলনায় এ মজুরি খুবই কম। তবু অন্য কোনো উপায় না থাকায় আমরা এ কাজ করতিছি। এভাবেই চলে শার্শার নাভারনের প্রতিদিনের এই শ্রমবাজার। শ্রমবাজারের কোনো নিয়ন্ত্রক নেই। দিনে এই বাজার থেকে পাঁচ থেকে সাত শত মজুরের কাজ জোটে বলে জানান স্থানীয়রা।
মজুর নিতে আসা শার্শা শেয়ালকুনা গ্রামের আবু হোসেন বলেন, আমার ৩০ বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান আবাদ করেছি, একযোগে সবার ধান কাটা শুর হয়েছে, স্থানীয় শ্রমিকরা প্রতিবিঘা মজুরি নিচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
এই বাজারে এক সঙ্গে অনেক শ্রমিক পাওয়া যায়। তাদের শ্রমের মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম বলে জানান তবিবর রহমান। সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার খানপুর থেকে আসা নূর হোসেন বলেন, আমাদের এলেকাতে কাজ না থাকাই প্রতি বছরের মতো আমরা এখানে কাজের জন্য আসছি।
সাতক্ষীর শ্যামনগর কৈখালী থেকে আসা আব্দুর রহমান বলেন, কাজের জন্য দশ সদ্যসের দল আসছি। দরকষাকষি চলছে আমাদের দাবি চার হাজার টাকা মহাজনের বলছে ৩৫শ টাকা।