যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীদের দিয়েই জয়কে অপহরণ চক্রান্ত

0
247

রিমান্ডে গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমানের। তদন্তসংশ্লিষ্টরা তাঁকে নানা প্রশ্ন করেছেন। তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তাঁর দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা মামলায় গত শনিবার শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ মামলায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে ডিবি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত গতকাল আদালতে মাহমুদুর রহমানকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত ২৫ এপ্রিল আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন। গোয়েন্দারা দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয়কে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে অপহরণের চক্রান্ত হয়েছিল। ডিবি দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ গতকাল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শফিক রেহমান যেসব তথ্য দিচ্ছেন তা যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তে এখন পর্যন্ত সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ পরিকল্পনার চক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র শাখার জাসাস নেতা মামুন, তাঁর ছেলে সিজার এবং আরেক প্রবাসী মিল্টন ভুঁইয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্য মতে, মিল্টন ভুঁইয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তিনি বিএনপির মতাদর্শে বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্র শাখার জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তাঁর ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার, মিল্টন ভুঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) একজন এজেন্ট ও তাঁর বন্ধু জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে জয়কে অপহরণের প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থ্যালারের মাধ্যমে সিজার এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়ে হাত করার চিন্তাভাবনা করেন। এরপর থ্যালারের মাধ্যমে রবার্ট লাস্টিক নামে এফবিআই এজেন্টকে পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়। মিল্টন ও সিজার মিলে এফবিআই এজেন্টদের সঙ্গে সে সময় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্বে মিল্টন এফবিআই এজেন্টদের পেছনে দুই হাজার ডলারও খরচ করেন। ২০১২ সালে মিল্টনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করেন শফিক রেহমান। তবে জয়কে অপহরণের পরিকল্পনায় তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন কি না তা নিয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা যাচাই-বাছাই চলছে। ডিবি সূত্র জানায়, অপহরণ পরিকল্পনা চক্রের বেশির ভাগ সদস্য বিএনপি মতাদর্শে বিশ্বাসী। শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্য গিয়ে বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলেও তদন্তে জানা গেছে। জয় অপহরণের পরিকল্পনাকারীদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান হতো। আদালত প্রতিবেদক জানান, জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো ও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে ডিবি। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত। ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবীর আদালত ২৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই দিন মাহমুদুর রহমানকে হাজির করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে রিমান্ডের আবেদনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি তিনি। মাহমুদুর রহমান ২০১৩ সাল থেকে কারাবন্দি। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুর পার্ট-২-এ বন্দি। নানা অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৬২টি মামলা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে বাংলাদেশি এক রাজনীতিককে ‘অপহরণের চক্রান্তে’ এফবিআইকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই রাজনীতিকের নাম মার্কিন আদালতের নথিপত্রে গোপন রাখা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জয়ই বাংলাদেশের ওই রাজনীতিক। জয় নিজেও ফেসবুকে নিজের প্রাণহানির সংশয়ের কথা একাধিকবার লিখেছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ সিজারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান পল্টন থানায় শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে ওই জিডি মামলায় রূপান্তরিত হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, সিজার এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে জয়কে অপহরণের চেষ্টা চালান। ওই ঘটনায় আরো অনেকে জড়িত ছিলেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারে সিজারের ৪২ মাসের কারাদণ্ড হয়। ঘুষ লেনদেনের সত্যতা ধরা পড়লে এফবিআইয়ের এক এজেন্টের বন্ধুর আড়াই বছরের কারাদণ্ড হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ছিল পুলিশের কৌশল : শফিক রেহমানকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার করাটা পুলিশের একটি কৌশল ছিল। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এ মন্তব্য করেছেন। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ক্রিমিনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার নিয়ে মিডিয়া টক শোগুলোতে যে ধরনের আলোচনা হচ্ছে তা ঠিক নয়। শুধু সংবাদমাধ্যমগুলোই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে অনেক কিছু লিখছে। যার কারণে বিভিন্নভাবে সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here