বাংলাদেশ শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ৯-এ থাকবে

0
275

বছরের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), চার মাসের মাথায় সেখান থেকে বাংলাদেশকে বেশ খানিকটা পেছনে নামিয়ে আনল সংস্থাটি। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল, ২০১৬’ প্রকাশ করে আইএমএফ এখন বলছে, এ বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। তাতে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে নবম স্থানে। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণকারী প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে এ বছর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের তথ্যের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সংবাদভিত্তিক মার্কিন ওয়েবসাইট ‘সিএনএন মানি’ গত ১ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ। এ বছর বাংলাদেশ ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ৭.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইরাক ১ নম্বরে এবং ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ভারত দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে থাকবে বলে ধারণা করেছিল আইএমএফ। সম্প্রতি প্রকাশিত আইএমএফের এপ্রিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৬.৬ শতাংশ। আগামী বছর তা ৬.৯ শতাংশে পৌঁছবে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে কোনো প্রক্ষেপণ না করে সংস্থাটি আবার ২০২১ সালের জিডিপির প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ উল্লেখ করেছে। তাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে মনে করছে আইএমএফ। ৮.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৬ সালে মিয়ানমার শীর্ষস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গণতন্ত্রে উত্তরণের পর দেশটিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বিপুল পরিমাণে বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাও উঠে গেছে। সে কারণেই মিয়ানমারের এ বছর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০১৭ ও ২০২১ সালে মিয়ানমারের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.৭ শতাংশ হারে অর্জিত হবে বলে মনে করছে আইএমএফ। গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের (২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত) ৯ মাসের জিডিপি গণনা করে এবং আগামী তিন মাসের জিডিপি প্রাক্কলন করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.০৫ শতাংশ হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। আইএমএফের প্রক্ষেপণের সঙ্গে সরকারের চলতি অর্থবছরের অর্জন ও আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রায় বড় ব্যবধান রয়েছে। আইএমএফের আউটলুক অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩.২ শতাংশ। পরের বছরগুলোতে এটি বেড়ে ৩.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে ধারণা করছে তারা। আর শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকায় ৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এ বছর মিয়ানমারের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে উঠে আসছে আইভরিকোস্টের নাম। ভুটান ৮.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তৃতীয় শীর্ষ এবং ভারত ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে চতুর্থ শীর্ষস্থানে থাকবে বলে মনে করে আইএমএফ। আগামী বছরেও ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ভারত ২০২১ সালে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পাবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া লাওস, কম্বোডিয়া, তাঞ্জানিয়া থাকবে বাংলাদেশের ওপরে। আফ্রিকার দেশ সেনেগাল ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের পরের অবস্থান বা দশম অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে আইএমএফ। এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও জাপানের প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা তুলে ধরে আইএমএফ বলছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকবে, আর বাড়তে থাকবে জাপানের প্রবৃদ্ধির হার। সংস্থাটির মতে, চীন ২০১৬ সালে ৬.৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬.২ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আর ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থেকে জাপান এ বছর ০.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাবে। ২০১৭ সালে আবারও জাপানের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ০.১ শতাংশে যাবে। কিন্তু ২০২১ সালে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পাবে জাপান। চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম ২০১৬ সালের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস প্রকাশ করে। তাতে বেশ জয়জয়কার ছিল বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ গত জানুয়ারির শুরুতে বলেছিল, ২০১৬ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ। তাদের হিসাবে ভারতের পরেই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ‘২০১৬’র সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক পারফরমারদের পরিচিতি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে কেবল ভারতের, ৭.৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ অর্জিত হবে বলে এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তাতে দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনায় ভারতের পরেই জায়গা পায় বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here