বাড়ীভাড়ার আগুনে দগ্ধ নগরবাসী

0
419

তিমির চক্রবর্ত্তী: চারশ বছরের পুরনো এই ঢাকা শহারে বাড়ীওয়ালার সংখ্যা কত হবে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারনা করা হয় সংখ্যাটি পাঁচ লাখের মতো হবে। আর এই পাঁচ লাখ লোকের মালিকানাধীন ভবনগুলোতে ভাড়া নিয়ে থাকেন প্রায় দুই কোটির বাসিন্দা। দুই কোটির মতো বসবাস করা  এই রাজধানীতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বাড়ীভাড়া। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাড়ীওয়ালারা প্রতিনিয়তই নিজেদের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই বাড়ীভাড়া বাড়িয়ে দেন। এ যেন বাড়ীভাড়ার মহোৎসব চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন বাড়ীওয়ালা বছরে দুই তিন বারও বাড়ীভাড়া বৃদ্ধি করে। কোন নিয়মনীতির বালাই নেই। অথচ ভাড়াটিয়াদের অধিকাংশই চাকুরীজীবি। চাকুরীজীবিদের বেতনের অধিকাংশই চলে যায় বাড়ীভাড়ায়। কিন্তু সেই হারে তাদের বেতন বৃদ্ধি পায় না। চাকুরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধি পায় প্রতি পাঁচ বছর পর অথবা কোন সরকার পরিবর্তন হলে নুতন পে-স্কেল দিলে বেতন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া চাকুরীজীবীদের আবার অধিকাংশই বেসরকারী চাকুরীতে কর্মরত, সরকারী চাকুরীজীবীদের স্কেল অনুযায়ী বেতন বাড়লেও বেসরকারী চাকুরীজীবীদের সেই তুলনায় বাড়ে না। তাই ভাড়াটিয়াদের বাড়ীভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আবার ঢাকা শহরের বিশাল একটি জনগোষ্ঠি গার্মেস সেক্টরে কর্মরত, এই গার্মেসের আবার ৮০% কর্মচারী নিন্ম বেতনে চাকুরী করে। তাই তাদের ক্ষেত্রে বাড়ীভাড়া যেন একটি বিশাল পাহাড় সমান বোঝ। উপায়ান্ত না পেয়ে তাদের থাকতে হয় টিনসেড বাসায় অথবা বস্তিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিন্ম  ও নিন্ম  মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলো দুই রুমের একটি ফ্লাট বাসার ভাড়া বহন করতে না পেড়ে এক রুম সাবলেট দিয়ে আট থেকে দশ জন লোক গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করেন। আর সেই সুযোগে বাড়ীওয়ালারা বাড়ীভাড়া বাড়িয়ে দেন হু হু করে। এ যেন সবাইকে জানিয়ে ঘোষনা দিয়ে দিনে দুপুরে ডাকাতি করা।বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক দেবাশীষ রায় বেতন পান সব মিলিয়ে আট হাজার টাকা। পল্লবীর ডি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের এক রুমের ছোট্ট বাসায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। হঠাৎ করে বাড়িওয়ালা দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। তিনি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন। কেটে দেওয়া হয় বাসার বিদ্যুৎ ও পানির লাইন। এই বাস্তব চিত্র দেখার কি কেউ আছে?

বাড়ীভাড়া কত হবে তারও সুস্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই ১৯৯১ সালের জং ধরা মরিচা পড়া আইনে।১৯৯১ সালে সরকার একটি আইন জারি করে। দেশের কোথাও এ আইন পুরোপুরি কার্যকর নেই। তা ছাড়া আইনটি যুগোপযোগীও নয়; বরং আইনে ভাড়া নির্ধারণের ধারাটি প্রশ্নবিদ্ধ।
ঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী আবু কায়ছার বলেন, ১৯৯১ সালের আইনে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে—সবার মোটামুটি অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী, ভাড়াটে বাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করবেন। ভাড়া কত টাকা, কত বছর পর ভাড়া বাড়বে—এসবই উল্লেখ থাকবে চুক্তিতে।

১৩.১ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির মালিক ভাড়া পরিশোধের রসিদ ভাড়াটেকে দেবেন। রসিদের একটি অংশ অবশ্যই বাড়ির মালিককে সংরক্ষণ করতে হবে। ঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মাসুদ রানা বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়ার রসিদ দেন না। আইন অনুযায়ী এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া বাড়িওয়ালা চুক্তি না করলে ভাড়াটে তাঁকে আইনি নোটিশ দিতে পারবেন।

১০ ধারায় বলা আছে, ভাড়া দেওয়ার সময় অতিরিক্ত সালামি, জামানত বা অনুরূপ কোনো টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু হরহামেশাই সেটি হচ্ছে। এ ছাড়া অগ্রিম ভাড়া হিসেবে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন না। নিলে অর্থদণ্ড হবে। আইন থাকলেও এটি দেখার কেউ নেই। প্রতি মাসে ভাড়া নেওয়ার রসিদ দিতে হবে, নইলে বাড়িওয়ালা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দুই বছর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো যাবে না। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি নেওয়া যাবে না। বেশি নিলে আদালতে যাওয়া যাবে। তবে মানসম্মত ভাড়া সহজে ঠিক করা যায় না।
ধারা ৮-এ বলা আছে, বাড়ির মালিক বাড়িভাড়া দেওয়ার পরও নিজ খরচে বাড়িটির এমন কিছু উন্নয়নসাধন করেন অথবা আসবাব সরবরাহ করে থাকেন, যাকে বাড়ি মেরামত বলা যায় না, তবে বাড়ির উন্নয়ন বলা যায়। এরূপ ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটে পরস্পর সম্মত হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবেন। এ ছাড়া বাড়ির পৌরকর, টোল ইত্যাদি বাড়লে ভাড়া বাড়তে পারে।

ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় এমন আরও অনেক কথাই উল্লেখ আছে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে। শুধু ভাড়াটে নন, বাড়িওয়ালাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও আছে এই আইনে। তবে একটি বাসার ভাড়া কত হবে, সেটি নির্ধারণ করার বিষয়টি অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এই আইনে। হুট করে ভাড়া বাড়ানো হলে ভাড়াটে আদালতে যেতে পারবেন। এর ফলে ভাড়া জমা হবে আদালতে। কিন্তু সচেতনতা কিংবা সাহসের অভাবে ভাড়াটেরা আদালতে যান না।

বাড়িভাড়া কত হবে?: বাড়িভাড়া আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা, এ আইনে বাড়িভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে ‘মানসম্মত ভাড়া’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের ১৫ শতাংশের বেশি হবে না।
বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটির মহাসচিব কামরুদ্দীন বলেন, আইনের এই ধারাটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ, ১৯৯১ সালে আইনটি করার সময় একটি বাড়ি নির্মাণের খরচ বর্তমানের তুলনায় অনেক কম ছিল। আবার তখন ফ্ল্যাটও সেভাবে ছিল না। ফলে তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ শতাংশ ধরলে ঠিকই ছিল। কিন্তু এখন একটি ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য যদি ৫০ লাখ টাকা হয়, তাহলে তার ১৫ শতাংশ আসবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। ১২ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি মাসে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া আসবে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। কাজেই আইনের এই ধারাটি এটি অবাস্তব এবং অমানবিক । যুগোপযোগী করে এমন আইন করতে হবে, যেন ভাড়াটে ও বাড়িওয়ালা—দুজনই সেটি মানতে পারেন। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা এই আইন না মানলে কী হবে, সেটি কোথাও পরিষ্কার করে বলা হয়নি।

পুরোনো আইন: বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি প্রথম জারি করা হয় ১৯৬৩ সালে। পরের বছর বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা দেশ স্বাধীনের পরও ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ১৯৮৬ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৬৩ সালের অধ্যাদেশটি বাতিল করা হয়। এর মেয়াদ ছিল তিন বছর এবং তা ১৯৮৯ সালে শেষ হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ জারি করেন। এ আইনে কোনো মেয়াদের কথা উল্লেখ নেই।

আদালতে রিট: বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল জনস্বার্থে একটি রিট করেন বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরসেদ। রিট আবেদনের শুনানিতে আদালতকে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়ার তালিকা অনুসারে ভাড়া আদায়ে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই আইন অনুসারে বিধিমালা প্রণয়নের বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে বাড়ির মালিকের বেআইনি কর্মকাণ্ডে ভাড়াটেরা অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০১০ সালের করা এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘কোন এলাকার ভাড়া কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর হোক—সেটাই রিট আবেদনে চাওয়া হয়েছে।
নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা দায়িত্ব: বাড়িভাড়া আইনের ৩-এর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার এই আইনের অধীনে কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করতে পারবেন। নিয়ন্ত্রক বাড়ির মালিক বা ভাড়াটের দরখাস্তের ভিত্তিতে মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবেন। জজ আদালতে এ ধরনের এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রক থাকলেও সাধারণ মানুষ তা জানে না।
ভাড়া বৃদ্ধির ওপর বিধিনিষেধ: আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি বাড়ানো হলেও তা আদায়যোগ্য হবে না।

সিটি করপোরেশনের তালিকা: বাড়ির বাজারমূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪-এ স্পষ্ট করা আছে। এটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন ঢাকা মহানগরকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে সম্ভাব্য বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এতে ভাড়ার হার খুবই কম দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। যেমন, ধানমন্ডি এলাকায় মূল রাস্তার পাশে একটি বাসার ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে এক হাজার বর্গফুটের একটি বাসার ভাড়া হবে আট থেকে ১৩ হাজার টাকা। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের এই তালিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছু জানেও না।
নিয়ন্ত্রকেরা যা বলেন: ঢাকায় এখন মোট ১০ জন বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক রয়েছেন। তাঁরা সবাই সহকারী জজ। তবে ঢাকার বেশির ভাগ ভাড়াটে আইন সম্পর্কে না জানার কারণে এই নিয়ন্ত্রকদের আদালতে যান না। ঢাকার একজন বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান আইনে ভাড়ার হার নির্ধারণ থেকে শুরু করে অন্য সব সুবিধাই পাবেন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেরা। আইন অনুযায়ী, বাড়িওয়ালারা দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। দুই বছর পর ভাড়া বাড়ালেও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে ভাড়া বাড়াতে হবে। কেউ সেটা না মানলে ভাড়াটের সেই ভাড়া মানসম্মত মনে না হলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১১) ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশ। আর ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। লাগামহীন এই বাড়িভাড়ায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত।
ক্যাবের সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, ঢাকায় গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাড়িভাড়া। ঢাকার মোট অধিবাসীর ৯০ শতাংশই ভাড়াটে। কিন্তু সরকার ভাড়াটেদের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। বাড়িভাড়া নিয়ে নামমাত্র যে আইন আছে, সেটি বাস্তবায়িত হয় না। কোন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেই। এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের করার কথা। আর ঢাকা সিটি করপোরেশন সব বাড়ির হোল্ডিং কর নির্ধারণ করে দেয়। কাজেই তাদেরই উচিত প্রতিটি বাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া। সিটি করপোরেশনের এমন একটি তালিকাও আছে, কিন্তু সেটিও মানা হয় না।
ভাড়াটেদের সচেতন করতে ও অধিকার আদায় করতে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটি। সংগঠনের মহাসচিব কামরুদ্দিন বলেন, ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারই উদ্যোগ নেয়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইনেও বাড়িভাড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে এই আইন সংস্কারের কথা আলোচনা হলেও এরপর আর কিছু হয়নি।
ক্যাবের জরিপ: ক্যাবের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩২১ দশমিক ০৬ শতাংশ। জরিপে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২১ দশমিক ৬৫, ১৯৯২ সালে ১৩ দশমিক ৪৩, ১৯৯৩ সালে ১২ দশমিক ১৬, ১৯৯৪ সালে ১৬ দশমিক ৪৪, ১৯৯৫ সালে ২২ দশমিক ৬১, ১৯৯৬ সালে ১৭ দশমিক ৮৬, ১৯৯৭ সালে ১৫ দশমিক ০৩, ১৯৯৮ সালে ১৪ দশমিক ০৯, ১৯৯৯ সালে ১৮ দশমিক ২৪, ২০০০ সালে ১৫ দশমিক ০৮, ২০০১ সালে ১৭ দশমিক ৪০, ২০০২ সালে ১৩ দশমিক ৪৯, ২০০৩ সালে ৮ দশমিক ৪০, ২০০৪ সালে ৯ দশমিক ৯৬, ২০০৫ সালে ৭ দশমিক ৮৯, ২০০৬ সালে ১৪ দশমিক ১৪, ২০০৭ সালে ২১ দশমিক ৪৮, ২০০৮ সালে ২১ দশমিক ০৭, ২০০৯ সালে ১৪ দশমিক ৮৫ এবং ২০১০ সালে ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ বাড়িভাড়া বেড়েছে।
বাড়িওয়ালারা যা বলেন: বেশির ভাগ বাড়িওয়ালার একই কথা। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি—এসব কারণেই বাড়িভাড়া বাড়াতে হচ্ছে।
ক্যাব বলছে, বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশই বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে কোনো কিছুর দাম সামান্য বাড়লেই ভাড়া বাড়ান মালিকেরা। ক্যাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাড়া দিতে দেরি হলে রাজধানীর ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। গৃহহীন মানুষের তুলনায় বাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাড়াসংক্রান্ত চুক্তি হয় না বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের মধ্যে।

সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অথচ জীবনযাপনের মৌলিক প্রতিটি অধিকার নিয়েই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে দেশের মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাসস্থানের সমস্যা। বাড়িভাড়া এখন যন্ত্রণার আরেক নাম।
বর্তমানে ঢাকা শহরে বাড়ী দিয়ে থাকা দুরুহ ব্যাপার এবং জীবনের সাথে প্রতিনিয়তই যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া। টাকা রোজগার করতে ঢাকা শহরে এসে রোজগারের অধিকাংশই যদি চলে যায় বাড়ী ভাড়ায়, তাহলে চাকুরীজীবিদের অর্থনৈতিক মুক্তি অথরাই থেকে যাবে।আর বাড়ীওয়ালাদের এই জুলুম আর অত্যাচার চলতেই থাকবে।অবশেষে এখন দেখার বিষয় কবে ভাড়াটিয়া আইন সংশোধন, যুগপোযুগী,বাস্তবসম্মত ও কার্যকারী করে বসবাসের নগরী হয়ে ওঠে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here