হাসিনা-ওবামা ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন

0
360

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিয়মিত অংশিদারিত্ব সংলাপ, নিরাপত্তা ও সামরিক সংলাপ এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগ সংলাপ অনুষ্ঠানে দুদেশের সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের হার্ভাড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক পলিসি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে এর সম্পর্ক শীর্ষক এক বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কেনেডি স্কুলে ‘ফিউচার অব ডিপ্লোমেসী প্রজেক্টের’ নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন ক্লুভার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন।
ওয়াশিংটন থেকে ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় একথা জানা যায়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবীয় সকল ক্ষেত্রে নারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতসহ বিশ্বে আগামীতে সমঅংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে কাজ করতে ব্যক্তিগত আগ্রহে উদ্যোগ নিয়েছেন।
এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতাও খুবই শক্তিশালী। উভয় দেশই বিশ্বাস করে যে গণতন্ত্রে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই।
তিনি বলেন, এই দুই নেতা গণতান্ত্রিক সুশাসন, বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সংহতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্ব শান্তি রক্ষায় পরস্পরকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করেন।
জিয়াউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও অনুরূপ জোরদার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে এ কারণে যে এই বিশ্ব শক্তিগুলো বাংলাদেশের ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’- নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা এটাও বিশ্বাস করে যে তাদের সবার অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রয়োজনে বাংলাদেশ বন্ধু হতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম-ইসি, সর্বশেস বিবিআইএনকে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) জোরদার করতে ঢাকার প্রচেষ্টায় অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, যৌথ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পর্যন্ত ১ কোটি বাংলাদেশী শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া এবং নিজ ভূ-খ- থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের কর্মকা- পরিচালনায় ভারতের মহান সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতকে আমাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে গণ্য করে। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-দিল্লী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। একইভাবে ভারতীয় নেতৃত্বও সাড়া দিচ্ছেন।
জিয়াউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-নয়াদিল্লী সম্পর্ক এখন সর্বোত্তম পর্যায়ে রয়েছে এবং উভয় দেশ উপ-আঞ্চলিক ও বৃহত্তর আঞ্চলিক যোগাযোগ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্প্রতি জ্বালানি সংযোগ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জিয়াউদ্দিন বলেন, দুদেশের মধ্যে সমুদ্র ও স্থলসীমা নির্ধারণের কাজ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে গত কয়েক বছরে বহু ক্ষেত্রে চমৎকার সম্পর্ক করেছে। চীন বাংলাদেশের বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার। এর সঙ্গে ২০১৪ সালে দ্বিমুখী বাণিজ্য ছিলো ৯ বিলিয়ন ডলার। চীন বাংলাদেশে এক বড় বিনিয়োগকারীও।
জিয়াউদ্দিন বলেন, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চীন এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামোর ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য অংশীদার।
তিনি বলেন, এ ছাড়া চীন থেকে ঢাকা সামরিক সাহায্য এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি পেয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষযে বলেন, অন্য কতিপয় স্বল্পোন্নত দেশের মতো বাংলাদেশ আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেতে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমরা সকল স্বল্পোন্নত দেশের সমান মর্যাদা চাই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমনটি করছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় বিমান সংস্থা ‘বিমান’ বোয়িং থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কিনছে এর মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত তেল ও গ্যাস কোম্পানী শ্যাভরন এবং ইলিকোট, ড্রেজার্স, জিইটি-এর মতো বহু মার্কিন কোম্পানী বাংলাদেশে কাজ করছে।
গতবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এফআইডি এসেছে প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পৌঁছেছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
জিয়াউদ্দিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ১৯৭১ সালের ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। শিক্ষার হার ২৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে এবং গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে ৭২ বছরে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, প্রধান এমডিজি বিশেষ করে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু ও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্য ২০১৫ সালের সময়সীমার আগের পূর্ণ হয়েছে। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রফতানি আয় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রেমিটেন্স পৌঁছেছে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পৌঁছেছে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
সরকারি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কিউএ অধিবেশন চলাকালে রাষ্ট্রদূত রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ সরকারের নানা উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব, সহিংস সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকা-ের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বার্তায় বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান ও ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) তৌফিক হাসান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here