ত্বক, ত্বকের বিভিন্ন সমস্য ও সমাধান

0
1069

ত্বক বলতে মানুষের শরীরের উপরের আবরণে বুঝায়। মানুষের সৌন্দর্যের সবচেয়ে বড় উপাদান তার এই ত্বক। আমাদের ত্বককে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। ধুলা বালি, ময়লা, রোদ, বৃষ্টি এই সবকিছু আমাদের ত্বকের উপর দিয়ে যায়। যার কারণে ত্বক হারায় তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য-উজ্জ্বল্যতা, হয়ে পড়ে মলিনও নিষ্প্রাণ। আর এর ফলে সৃষ্ট ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় আমরা অনেকেই হাতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভূগি। তবে ত্বকের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা, একটু সচেতনতা আর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমের আমরা ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরে পেতে পারি।

ত্বক

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধান সম্পর্কে জানার আনার আগে ত্বক ও এর গঠন সম্পর্কে জানা যাক। ত্বক হলো মানব দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ যা বেশ কয়েকটি স্তরের সমন্বয়ে গঠিত। নরগোষ্ঠি বা বংশগত বৈশিষ্ট্যের কারনে ত্বকের রং ফর্সা, শ্যামবর্ণ বা কৃঞ্চবর্ণ হয়ে থাকে। এছাড়া কারো ত্বক হয় শুষ্ক, কারো আবার তৈলাক্ত। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ত্বকের ওজন প্রায় চার কেজি এবং উপরিতল প্রায় ২১ বর্গ ফুট। ত্বকের দুটি স্তর রয়েছে যথা: ১। এপিডার্মিস ২। ডার্মিস। ত্বকের সর্বাপেক্ষা বাহিরের কোষীয় স্তরকে বলা হয় এপিডার্মিস যা আবার সাজানো রয়েছে পাঁচটি উপস্তরে। আমারা শরীরের বাহিরের যে স্তরটিকে দেখতে পাই সেটি এপিডার্মিসের একটি উপস্তর।  যার নাম স্ট্র্যাটার্ম কার্নিয়াম। এপিডার্মিস স্তরে নার্ভ থাকলেও কোনো রক্তনালী নেই। এপিডির্মিসের নিচের স্তরটিকেই বলাহয় ডার্মিস। এই স্তরে নার্ভ, রক্তনালী, চুরের গোড়া বা হেয়ার ফলিকন, তৈল গ্রন্থি, ঘর্মগ্রন্থি, তারুন্য ধরে রাখার ইলাস্টিন ও কোলাজেন তন্তুসহ নানাবিধ উপদান রয়েছে।

এই অনুচ্ছেদে ত্বকের বিভিন্ন রোগের মধ্যে যেসব রোগ আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যহানি করে সেগুলো ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে, ব্রণ, মেছতা, একজিমা, চোখের নিচে কারো দাগ, ত্বকে বয়সের ছাপ ইত্যাদি।

ব্রোণ

ত্বকের যে রোগটিতে আমরা কমবেশি সবাই শিকার হয়ে থাকি তা হচ্ছে ব্রণ। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়৷ ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ তবে অনেকে আরো মধ্যবয়সে এসেও এই সমস্যায় ভুগতে থাকেন।ব্রণ হল একধরনের ফুসকুঁড়ি যা অনেক সময় পুঁজে পূর্ন থাকে, ত্বকের ক্ষত, ত্বকের প্রদাহ যা কালো দাগ বা চিহ্ন হয়ে থাকে। এগুলো কয়েক ধরনের হয়। ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ময়লা-পুঁজ জমে ছিদ্র বন্ধ হয়ে কালো বা সাদা মাথা বিশিষ্ট গোঁটার মত ওঠা, সিস্ট বা পুঁজকোষ, আঁশ সদৃশ লাল ত্বক ইত্যাদি দেখা দেয়। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে৷ এছাড়া বেশি করে পানি পান ও শাক-সবজি খেতে হবে৷

মেছতা

মেছতার প্রদান কারন ত্বকে মেলানিনের সারসাম্যহিনতা। আমাদের ত্বকের নীচে মেলানিন নামক এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ থাকে। কোন কারণে ত্বকের বিশেষ জায়গায় এটির কার্যক্ষমতা বেশি হলে ত্বকের সেই অংশটি পার্শ্ববতী অংশের চেয়ে বেশি গাঢ় হয়ে যায়। ফলে ওই অংশটি কালো বা বাদামী থেকে হালকা বাদামী দেখায়। একে মেছতা বলে। এটি কোন এলার্জী বা ক্যান্সারও নয়, এটি ত্বকের সৌন্দর‌্যহানিকারক একটি রোগ। গালে, নাকের উপরে, থুতনিতে উপরের ঠোঁটের উপরাংশে, গলায় ইত্যাদি জায়গায় মেছতা দেখা যায়।  সৌন্দর‌্যহানির মাধ্যমে এটি আমাদের সামাজিক জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তোলে। যেকোনো মেছতা হলেও ১৫-১৬ বছরের কিশোর-কিশোরীদের বেশি হতে দেখা যায়। মেছতা পুরাপুরি প্রতিকার করা সম্ভর হয়না। তবে অবস্থার উন্নতি করা যায়। তাই মেছতা হলে প্রথমেই একজন ভাল ডার্মাটোলজিস্টকে দেখাতে হবে। মেছতা দুর করতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করুন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। আর আপনি ক্যাফেইন জাতীয় খাবারে অভ্যস্ত হলে তার চেয়েও বেশি পানি পান করুন। ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। শাকসবজি তাজা ও কাঁচা-পাকা ফল খেতে চেষ্টা করুন। মুখমণ্ডল ছাড়াও কারো যদি শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মেছতার প্রকোপ বেশি থাকে তবে তাকে আঠালো বা ভুট্টা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো।

একজিমা

একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়৷ তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক; শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ। একজিমা সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।তাই আক্রান্তকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সাহায্য এবং রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য| তবে ক্ষারযুক্ত সাবান, ডিটারজেন্ট, গ্যাসোলিন থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন, সিনথেটিক এবং উলের কাপড় এড়িয়ে চলুন, গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন, ৪) গোসলের পরপরই শরীরে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

দাদ

শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে৷ এটা ছোয়াঁচে রোগ৷ আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়৷ মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়৷ প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে৷ এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷ অনেক সময় ব্যবহৃত সাবান থেকেও দাদ হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে৷

বলিরেখা

চোখের তলায়-মুখের দুই পাশ ও কপালে ভাঁজ, চোয়ালের ত্বক ঝুলে যাওয়া, খোলা রোমকূপ, নির্জীব ত্বক এসবের কারণে বয়সের তুলনায় কাউকে বেশি বয়সি মনে হওয়াকেই বলিরেখা বা এজিং সমস্যা বলি। বলিরেখার প্রধান কারণ হল সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি। তাই রোদকে এড়িয়ে চলুন। এছাড়া অতিরিক্তত নামসিক চাপ, ধুমপান করা, প্রক্রিয়াজাত জাবার গ্রহণ, রাতজাগা ইত্যাদির করণে বয়সের ছাপ দেখা দেয়। এগুলো এরিয়ে চলূন। প্রচুর পানি পান করুন, সবুজ শাখ সবজি খাদ্য খাওয়ার অব্যাস করুন।

ত্বকের পুষ্টি উপাদান

সুস্থ্য ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপদানাগুলো নিশ্চিত করা গেলে আমরা উপরের সমস্যাগুলো এড়িযে যেতে পারি। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ওমেগা-৩ ইত্যাদি ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করে। আর এসব উপাদান রয়েছে সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূলে। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন সবুজ শাক-সবিজ। প্রতিদিন ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর তা করতে পারলেই আপনি মুক্তি পাবেন ত্বকের এইসব অপ্রত্যাসিত সমস্যা থেকে। এছাড়া আপনার জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন ও একটু বাড়তি সচেতনাই আপনাকে দিতে পারে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক ও সৌন্দর্যের পূর্ণতা।

 

এসব রোগের প্রাদুর্ভাব যেমন বেড়েছে, সেই সাথে উন্নতি লাভ করেছে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানও। আর তাই যারা ইতিমধ্যে ত্বকের এসব সমস্যায় শিকার হয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা জেনে খুশি হবে যে, চিকিৎসার মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রেণে রাখা সম্ভব। দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ রোগের ক্ষেত্রেই পেতে পারেন শতভাগ মুক্তি। তবে সতর্ক থাকবেন ভুল চিকিৎসা থেকে। বাজারে বিদ্যমান ক্রিম বা কসমেটিক্স বাছাইয়েও শতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ এসব ব্যবহারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আর এসব পন্য আপনাকে সাময়িভাবে উপকৃত করলেও স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনা। সৌন্দর‌্যহানিকারী এসব সমস্যার ক্ষেত্রে রূপবিশেষজ্ঞের পরাপর্শ গ্রহণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ। দেশে বিদ্যমান রূপবিশেষজ্ঞ চিকিৎস রয়েছে এমন ক্লিনিক বা সেবামুলকগুলোকে বেছে নিতে পারেন আপনি। এধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডাঃ ঝুমু খানের লেজার মেডিক্যাল সেন্টার বেশ পরিচিতি। এছাড়া আপনার আশেপশের এধরণের প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে মুক্তিপেতে পারেন অস্বস্থিকর এসব ত্বকের রোগ থেকে।

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here