মেহেরপুরে লিচুচাষীদের স্বপ্নও ফেটে গেল

0
369

মাহাবুব চান্দু , মেহেরপুর প্রতিনিধি:
এসময় লিচুর লাল রঙ দেখে লিচুবাগান মালিক ও পথচারীদের মন ভরে যাবার কথা। অথচ তার বিপরিত চিত্রর ঘটনা এখন মেহেরপুরে। লিচু চাষীরা সারারাত ধরে লিচুবাগানে সেচ দিয়েও তাপদাহে লিচু ফেটে যাওয়া রোধ করতে পারছেনা।
শনিবার সরেজমিনে মেহেরপুরের লিচুবাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে তাপদাহে লিচু ফেটে গাছে দোল খাচ্ছে। সেখানে পক্ষিকূল সেই ফাটালিচুতে ঠোট লাগিয়ে রস চুষে নিচ্ছে। মেহেরপুর শহরের উপকন্ঠে ঝাউবাড়িয়া সড়কে দেখা গেল লিচুচাষী হাসেম আলীর ৩১টি লিচুগাছের লিচু ফেটে একাকার। হাসেম আলী এবার তার লিচুবাগানে তিনলাখ টাকার লিচু বেচা কেনার আশা করেছিলেন। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কেনা বাগান থেকে এবার অর্ধেক টাকাও ঘুরবেনা বলে জানান।
মেহেরপুর জেলায় স্থানীয় মোজাফ্ফর জাতের লিচুর চাষ বেশী। জেলায় এবার ৩০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হতো বলে কৃষি বিভাগ আশা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগে চাষিদের মুখে হতাশা আর আর্থিক ক্ষতির ছাপ। অতিরিক্ত তাপদাহে পুড়ে অপুক্ত অবস্থাতেই লালচে হয়ে ফেটে যাচ্ছে লিচুগুলো। লিচুগুলি আকৃতিতেও রয়ে গেছে ছোট ছোট।
বাগানের প্রতিটি গাছেই দক্ষিন ও পশ্চিম দিকের লিচু তাপদাহে পুড়ে ফেটে গেছে। পূর্ব ও উত্তর দিকের লিচু অনেকটা ভালো আছে। লিচু চাষীরা এসব ফেটে যাওয়া লিচু স্থবির হয়ে দেখছে আর ভাবছে লিচুর সাথে তাদের বোনা স্বপ্নও ফেটে চৌচির হয়ে গেল।
লিচু চাষী নাদিম হোসেন জানান তিনি ৩০ হাজার টাকায় একটি ২৫টি গাছের লিচু বাগান কিনেছিলেন। যা লিচু হয়েছিল তার সবটাই তাপদাহে ঝরে পড়েছে। লিচু বাগানে দুইমাস ধরে যে পরিশ্রম করেছেন তাও বিফলে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই এমন তীব্র দাবদাহ লিচু চাষীদের সর্বশান্ত করে দিল।
চাষি সহোরফ হোসেন জানান দু‘একদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে যে লিচুগুলো এখনও ভালো আছে সেগুলোও ফেটে নষ্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থায় অপুষ্ট লিচু যে দাম পাচ্ছে সেই দামেই বিক্রি করে দিচ্ছে বাগান থেকে। বাজারে এখন একশ কুড়ি টাকা শ হিসেবে লিচু বিক্রি হতে দেখা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বারদি হর্টিকালচার সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে হয়তো চাষিদের বেশ ক্ষতিতে পড়তে হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় রয়েছে যেগুলো মেনে চলতে হবে। প্রতিদিন রাতে পানি স্প্রে করলে তাপদাহ থেকে মুক্তি পাবেন চাষীরা। প্রতি লিটার পানিতে রোভরাল বা অনুরূপ দলীয় ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম এবং ডেল্টামেথ্রিন (ডেসিস) নামক কীটনাশক এক মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা ও ছত্রাকের হাত থেকে লিচু নিরাপদ থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here