গ্রুপ বীমার আওতায় আসছে শ্রমিকরা

0
394

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় গতকাল শনিবার দুপুরে প্রচণ্ড গরমে রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে সিটের ওপর শুয়ে ছিলেন চালক শুক্কুর আলী। তাঁর পাশেই রিকশা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন আরেক চালক হাসিম উদ্দিন। তাঁদের কাছে মে দিবসের কথা জানতে চাইলে তাঁরা উল্টো জানতে চান, মে দিবস কী? এই দুজন না জানলেও মে দিবস সম্পর্কে জানেন মোটর শ্রমিক আরিফুল ইসলাম বিল্লাল। মে দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। ফলে বিকেল পর্যন্ত বিল্লালের ছুটি। এ কারণে বেশ আনন্দিত তিনি। দেশের বেশির ভাগ শ্রমিকই তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন নয়। ফলে  বছরের পর বছর মে দিবস পালিত হলেও শ্রমিকরা এর তেমন সুফল পাচ্ছে না বলে শ্রমিক নেতাদের দাবি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে নেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিকসহ সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের গ্রুপ বীমার আওতায় নেওয়া হচ্ছে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, গ্রুপ বীমার ক্ষেত্রে মাসে শ্রমিকরা দেবে মাসে ৪৫০ টাকা আর সরকার দেবে ৮৫০ টাকা। এই এক হাজার ৩০০ টাকা মাসে মাসে জমা হবে। কোনো শ্রমিক মারা গেলে তাকে দুই লাখ টাকা এবং কাজ করতে গিয়ে অঙ্গহানি হলে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। মে দিবসের প্রাক্কালে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এই গ্রুপ বীমার বিষয়টি শুনেছেন কি না জানতে চাইলে সেগুনবাগিচা এলাকার দুই রিকশাচালক না সূচক জবাব দেন। কিছুটা অবাকও হন তাঁরা। বুঝিয়ে বললে চালক হাসিম উদ্দিন বলেন, এইডা তো খুব খুশির খবর। আমি অবশ্যই এই ইনস্যুরেন্স করুম। এই বীমার সংবাদ শ্রমিকদের জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার গতকাল বলেন, আমরা এই গ্রুপ বীমার বিষয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে জানানোর চেষ্টা করছি। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে বলা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। শ্রমিকদের জন্য যা করা হচ্ছে : শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরসমূহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট আইন, নীতিমালা, বিধিমালা প্রণয়নসহ সময়ে সময়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শ্রম পরিদপ্তর থেকে শ্রমিকদের সংগঠন সংক্রান্ত বিষয়াদি, সালিসি কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি দেখা হয়। সারা দেশে সাতটি শ্রম আদালত ও একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আইনি প্রতিকার পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করা হচ্ছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সেক্টরে মজুরি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজ রবিবার ১ মে, মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেছিল শ্রমিকরা। এতে অংশ নিয়েছিল প্রায় তিন লাখ শ্রমিক। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। সেদিন শ্রমিকদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শিকাগোর রাজপথ। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল গ্রেপ্তার করা ছয় শ্রমিককে। ১৯৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ওই দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। বাংলাদশে ১৯৩৮ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মে দিবস পালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয় দিবসটি। ওই বছর সদ্য স্বাধীন দেশে ১ মে উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ১ মে ছুটি বহাল আছে। বিভিন্ন কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেছেন, সকল শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আগামীতেও আমরা একইভাবে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাব। মাতৃত্বকালীন ছুটি চাইলে ছাঁটাই করার অভিযোগ : মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরকারিভাবে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করা হয়েছে। অথচ গার্মেন্টশিল্পে নারীরা ছয় মাসের ছুটি চাইতে গেলে তাদের ছুটি তো দেওয়া হয়ই না বরং তাদের কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয় বলে অভিযোগ করলেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি শামীমা আক্তার শিরিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মে দিবস এলেই সবাই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। বাস্তবে কী হচ্ছে? তিন মাসের বেশি মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন না নারী শ্রমিকরা। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি অনেক গার্মেন্টে।’ তিনি জানান, বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, ডে কেয়ার সেন্টার করা হলেও সেখানে শিশু নেই; গার্মেন্টের কাজ করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here