নিজামীর রিভিউ পিটিশন: চূড়ান্ত রায় আজ

0
379

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনঃবিবেচনা চেয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ পিটিশনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের দৈনন্দিন কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে রিভিউ পিটিশনটি রায় প্রদানের জন্য রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি গ্রহণ করে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করে দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধের দায়ে গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীকে চারটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। আপিল বিভাগ তিনটি অপরাধে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত দুই নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় ছিলেন নিজামী। সভার পরিকল্পনা অনুসারে  ১৪ মে দু’টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪৫০ জনকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। এছাড়া প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে রাজাকাররা। ছয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ নভেম্বর ধূলাউড়া গ্রামে ৩০ জনকে হত্যায় নেতৃত্ব ও সম্পৃক্ততা রয়েছে নিজামীর।

১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে নৃশংসতা চলাকালে মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘ ও স্বাধীনতা বিরোধী সহযোগী বাহিনী আল বদরের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু যখন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় আসন্ন হয়ে ওঠে তখন ছাত্র সংঘ ও আল বদরের সদস্য দেশের বুদ্ধিজীবী নিধনের ষড়যন্ত্র করে। ১৯৬৬ সাল থেকে নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। এই ছাত্র সংঘই মুক্তিযুদ্ধের সময় আল বদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। ফলে নিজামী আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় আল বদর সদস্যদের সহযোগিতা, অনুমোদন, নৈতিক সমর্থন ও তার কর্মের বিষয়ে নিজামী সম্পূর্ণরূপে সচেতন ছিলেন। আল বদর নেতা হওয়ার জন্য অধঃস্তনদের উপর নিজামীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো। আল বদর সদস্যদের অপরাধ থেকে নিবৃত্ত না করায় তাদের অপরাধের দায় কোনোভাবেই নিজামী অস্বীকার করতে পারেন না। এই তিনটি অভিযোগে নিজামীকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দায়েরকৃত ছয়টি আপিলের ওপর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা ও এম কামারুজ্জামান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় ইতিমধ্যে কার্যকর করেছে সরকার। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিলে তা সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং নিজামীর আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় মারা গেছেন জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম। পরে এসব আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে আদালত।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here