নিজামীর ফাঁসি কার্যকর

0
406

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তার ফাঁসির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে তৃতীয় কোনো মন্ত্রীর ফাঁসি হলো। এর আগে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি একসঙ্গে কার্যকর করা হয়। নিজামীর ফাঁসির মধ্যে দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হলো। এর আগে দুপুরে মতিউর রহমান নিজামী জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করবেন না। এরপরই তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের প্রস্তুতি নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। রাত ৭ টা ৫২ মিনিটে নিজামী পরিবারের ২৩ জন দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। এরপর তারা ৯ টা ৩৩ মিনিটে বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা না বলে গাড়িতে উঠে যান। গাড়িতে যখন স্বজনরা উঠছিলেন তখন কারাগারের সামনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁসি ফাঁসি বলে স্লোগান দেয়।   স্বজনরা বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই ফাঁসি কার্যকরের জন্য কারা কর্মকর্তা, পুলিশ, চিকিত্সকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফাঁসির মঞ্চে যান। আর ১২ জন সশস্ত্র কারারক্ষী তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এরপর গত বছর ১১ এপ্রিল কার্যকর করা হয় আরেক জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি। গত বছর ২০ নভেম্বর রাতে কার্যকর করা হলো সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি। ফাসি কার্যকর উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত হন। তারা ফাঁসি কার্যকরের খবর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান। জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবির, কারাধ্যক্ষ নেছার আলম প্রমুখ। দণ্ড কার্যকর করতে প্রধান জল্লাদ ছিলেন রাজু। তার সহযোগি ছিল আরো পাঁচজন। যেভাবে গ্রেপ্তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিচার শুরু ২০১২ সালের ২৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু করে। ট্রাইবুনালের রায় মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসির দণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। আপিল বিভাগের রায় ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারিতে আপিলেও ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদনের রায় চলতি বছরের ২৯ মার্চ নিজামী আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেনার আবেদন করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এবং উচ্চ আদালতে দেওয়া ফাঁসির দণ্ড গত ৫ মে রিভিউয়েও বহাল থাকে। রায় কার্যকর বিচার প্রক্রিয়ার সকল ধাপ শেষে একজন ফাঁসির আসামির সর্বশেষ সুযোগ থাকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার। কিন্তু, মতিউর রহমান নিজামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান নি। এরপর মঙ্গলবার রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here