ডি-৮ সদস্যভূক্ত দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি জোরদারের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে বিরাজমান সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছেন সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শিল্পমন্ত্রীগণ।
এ লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলো দ্রুত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে।
মিশরের রাজধানী কায়রোর মেরিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত পঞ্চম ডি-৮ শিল্পমন্ত্রী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সর্বসম্মতভাবে বুধবার এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মিশরের প্রধানমন্ত্রী শেরিফ ইসমাঈল এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মিশরের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকৌশলী তারেক কাবিলসহ তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার শিল্পমন্ত্রী এবং ডি-৮ মহাসচিব ড. সাঈদ আলী মোহাম্মদ মৌসাভী বক্তব্য রাখেন। এতে বিভিন্ন দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা বলা হয়।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলোর এ অর্থনৈতিক জোট বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। শুধুমাত্র দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি অটোমোবাইল, পেট্রোকেমিকেল, সিরামিক, ইস্পাত, টেক্সটাইল, জাহাজ নির্মাণ, আইসিটি, টেলিযোগাযোগ ও তৈরি পোশাকখাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি যৌথ প্লাটফর্ম গড়ে তোলার তাগিদ দেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গত সাত বছরে বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ এর আলোকে আগামী বছরগুলোতে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৫ পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। মেশিনারী শিল্পে যে সব দেশের দক্ষতা ও উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা রয়েছে, সেগুলো অন্য সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যের অশুল্ক বাধা দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিন্ন মান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি এ লক্ষ্যে ডি-৮ সচিবালয়কে শক্তিশালীকরণ ও এর জনবল বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
সভার সাইডলাইনে আমির হোসেন আমু মিশরের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকৌশলী তারেক কাবিল এবং তুরস্কের বাণিজ্য উপমন্ত্রী হাসান আলী সেলিকের সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। বৈঠককালে তিনি বাংলাদেশে সার ও কাগজ উৎপাদন, পেট্রোকেমিকেল, তরল গ্যাস বোতলজাতকরণ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
মিশরের মন্ত্রী এসবখাতে বিনিয়োগে তার দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা আগ্রহী বলে জানান। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মিশরের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে আমির হোসেন আমুকে আশ্বস্ত করেন। তিনি এ বিষয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তুরস্কের উপমন্ত্রী বাংলাদেশের এসএমই খাতে সমন্বিত উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আলোচনাকালে উভয় দেশের মন্ত্রী বিনিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হন।