উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে যুক্তরাষ্ট্র

0
416

সন্ত্রাস ও উগ্রবাদীদের হারাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল গত বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) প্রতিনিধি সভার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটিতে বাজেট  নিয়ে আলোচনায় বলেন, ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের এবং আমরা আশাবাদী, সংকল্পবদ্ধ অংশীদারির মাধ্যমে হুমকি হয়ে ওঠা উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের হারাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতাও করতে পারব।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান হত্যার পটভূমিতে সম্প্রতি ঢাকা সফরে তিনি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বার্তাগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ওই বার্তাগুলো হলো, ‘সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে আছে এবং এ ধরনের চ্যালেঞ্জের সময় আইনের শাসন, রাজনৈতিক অধিকার ও বাংলাদেশের তাদের মনের কথা বলার সামর্থ্যকে সম্মান জানানো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, এ লড়াইয়ে সফল হতে হলে মুক্তমত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজের জন্য সুযোগ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। হামলা প্রতিরোধে নজরদারি, ঝুঁকি চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম, হামলা তদন্তে সুপ্রশিক্ষিত পুলিশ এবং স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা থাকাও দরকার।  নিশা বিসওয়াল তাঁর বক্তৃতায় ২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যয়ের জন্য ২০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার চেয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেস অফিসের পরিচালক এলিজাবেথ ট্রুডো বলেন, সহিংস উগ্রবাদবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারের পাশেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার (বাংলাদেশ সরকার) এ সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, তাদের (বাংলাদেশের) প্রচেষ্টাকে সফল করতে সহায়তা দেওয়া এবং এর পাশাপাশি মানবাধিকারকেও সম্মান দেখানো।’ যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবরণী থেকে জানা যায়, প্রতিনিধি সভার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটিতে বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর বাজেট নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল তাঁর দপ্তরের অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় কর্মসূচি বাড়ানোর পাশাপাশি এই ঝুঁকির নতুন মাত্রা বুঝতে ও তা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নতুন নতুন উপায় নিয়েও আমরা কাজ করতে চাই। এসব প্রচেষ্টায় আমরা যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বাংলাদেশে আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি।’ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদবিরোধী লড়াইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে নিশা বিসওয়াল বলেন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুকের প্রায় ২৮ লাখ অনুসরণকারী (ফলোয়ার) রয়েছে। এ সংখ্যা সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। নিশা বিসওয়ালের বক্তৃতায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার চিত্রও উঠে আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত স্থানে এর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সংযোগ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রমাণ করে যে সংকল্পবদ্ধ অংশীদারির মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। তিনি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ভূমিকাও তুলে ধরেন। বলেন, বাংলাদেশের জন্য তিনি যে ২০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার বাজেট অনুমোদনের অনুরোধ করছেন সেটি এ দেশের ভবিষ্যৎ সাফল্য নিশ্চিত করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য বিনিয়োগ করছি। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় এবং শান্তিরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমাদের শীর্ষ কৌশলগত অংশীদার।’ নিশা বিসওয়াল বাংলাদেশের মুসলমান জনগোষ্ঠী, তারুণ্য, সহিষ্ণুতা, বৈচিত্র্য, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্যনিরাপত্তা, বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার উদাহরণ দেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের কথা তুলে ধরেন। অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার কথা জানান নিশা বিসওয়াল। এগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে কাজ করার কথাও তিনি জানান। এ ছাড়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার পূরণের তাগিদ দেন তিনি। নিশা বিসওয়াল বলেন, উগ্রবাদী সহিংসতায় বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঝুঁকিতে পড়েছে। আমাদের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি সাবেদ সাথী জানান, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি আবারও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেস অফিসের পরিচালক এলিজাবেথ ট্রুডো আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক উগ্রপন্থী হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এর পরও আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এসব হামলা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তারা এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। এসব হামলা চালিয়েছে ক্ষুদ্র একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যারা স্বাধীন মতের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের মনোযোগ তাদের সমর্থন করার ওপর, যাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা সফল হয় এবং একই সঙ্গে মানবাধিকারও সমুন্নত থাকে।’ তিনি বলেন, বহুত্ববাদী একটি সমাজ হিসেবে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। ওই সমাজ বৈচিত্র্যকে মূল্যায়ন করে এবং মতামতের স্বাধীন বিনিময়কে স্বাগত জানায়। এসব মূল্যবোধের ওপরই উগ্রপন্থিরা হামলা চালাচ্ছে। প্রেস অফিসের এই পরিচালককে প্রশ্ন করা হয়, ‘আল-কায়েদা বা আইএসের মতো উগ্রপন্থি সংগঠন বাংলাদেশে তাদের অবস্থানকে কত দূর পর্যন্ত শক্তিশালী করতে পেরেছে? আপনার কাছে কি কোনো তালিকা আছে?’ এর জবাবে এলিজাবেথ ট্রুডো বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশ সরকারই সুনির্দিষ্টভাবে আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছে। আমি আপনাকে এ বিষয়ের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা নিয়ে সেখানেই কথা বলতে বলব। সহিংস উগ্রবাদ প্রত্যক্ষ করছে বলে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকব।’ বাংলাদেশে উগ্রবাদী সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার ডিউপন্ট সার্কেলে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here