আজহারউদ্দিনের বর্ণিল জীবনে নগণ্য ক্রিকেট!

0
227

কব্জির মোচড়ে তিনি পাল্টে দিতে পারতেন ক্রিকেটের চিত্রনাট্য। পরপর তিনটি টেস্টে শতরান দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে তাঁর নাটকীয় আগমণ সবারই জানা। তিনি মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন।

ভারতের অন্যতম সফল ক্রিকেট অধিনায়কদের তালিকায় অনেক আগেই জায়গা করে নিয়েছেন এই হায়দ্রাবাদী। একসময়য়ের এই ক্রিকেট তারকার পতনও কম রঙিন নয়। অবস্থা আজ এমন পর্যায়ে যে তাঁর জীবনে ক্রিকেট এখন শুধুই গৌণ।

মাত্র ২১ বছর বয়সে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন তখন তাঁর মতো বিনয়ী স্বভাবের তরুণ ছিল বিরল। দেশের মাটিতে হোক কিংবা বিদেশে-যেখানেই খেলতে যান না কেন, সবসময় সাথে থাকত প্রার্থনা করার আসন। মাঠে নেমেও কয়েকবার গলার বড় মাদুলিকে প্রণাম করতে দেখা যেতো। অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য আসার পরেও এই আচরণ বজায় ছিল। এরইমধ্যে ২৪ বছরের যুবক আজহার বিয়ে করলেন ১৬ বছর বয়সী  কিশোরীকে। কয়েক বছর পর দুই ছেলের বাবা হলেন আজহার। স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে তখন ভরপুর সংসার। যদিও ক্যামেরার সামনে খুব একটা দেখা যেত না নওরিনকে।

কিন্তু হঠাৎ ভাঙনের সুর বেজে উঠলো। ১৯৯৪ সালে এক বিজ্ঞাপনী শ্যুটিং-এ আজহারের সঙ্গে আলাপ হল ডাকসাইটে সুন্দরী সঙ্গীতা বিজলানির। নয়ের দশকের সাবেক মিস ইন্ডিয়া সঙ্গীতা তখন আহত বাঘিনী। বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে যাওয়ার পরই ভেঙে গেছে সালমান খানের সঙ্গে সম্পর্ক। সঙ্গীতার অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের সোমি আলির জন্য সালমান নাকি তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিলেন।

নিজের ক্ষতে প্রলেপ দিতে সঙ্গীতা আঁকড়ে ধরলেন আজহারকে। এদিক-ওদিক আজহারের ছায়াসঙ্গী তখন সঙ্গীতা। পরকীয়া প্রেমের জের পড়ল আজহারের ঘরে-বাইরে। ধীরে ধীরে চলে গেল ক্রিকেটীয় ফর্ম। অশান্তির ঝড় তছনছ করে দিল দাম্পত্য জীবন। ১৯৯৬-এ ভেঙে গেল আজহার-নওরিনের ৯ বছরের বৈবাহিক জীবন। সেসময় খোরপোশ হিসাবে বহু দামী জিনিস দিতে হয়েছিল স্ত্রী নওরিনকে। তবে দুই ছেলেই থেকে যায় আজহারের পৈতৃক বাসাতেই।
১৯৯৬ সালে সঙ্গীতার সাথে দ্বিতীয় বার বিয়ের পিড়িতে বসলেন আজহার। যদিও সেসময় সঙ্গীতাই নাকি বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। আসলে সালমান-পর্বের পুনরাবৃত্তি চাননি। দুইজনের মেলামেশা এমন নিবিড় ছিল যে বিয়ের আগেই সঙ্গীতা নাকি অন্তসত্বা হয়ে পড়েছিলেন। যদিও আজহার-সঙ্গীতার কোনও সন্তানের খবর প্রকাশ্যে আসেনি ।

সম্পর্কের ঝড় থিতু হতে না হতেই আজহারের জীবনে এল আর এক ঝড়! ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং-এর কলঙ্ক। ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হতে হল সফল অধিনায়ককে। ক্রিকেটহীন জীবনে পরবর্তী সময়ে এসেছে রাজনীতি । কংগ্রেসে যোগ দিয়ে লড়েন নির্বাচনে। সেখানেও সাফল্য এল, সংসদ সদস্য হলেন। এরইমধ্যে ২০১২ সালে ক্রিকেট-নির্বাসন উঠে গেলেও ফের ঝড় পারিবারিক জীবনে। পথ দুর্ঘটনা হারাতে হলো সম্ভাবনাময়-প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার মোহাম্মদ আয়াজউদ্দিনকে।

আর সেইসঙ্গেই মৃত্যু হয় আজহারের দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবনেরও। ২০১০ সালে ডিভোর্স দিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গীতাকে। এর পিছনেও নাকি ছিল তৃতীয় নারীর প্রবেশ। ভারতের প্রখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জোয়ালা গাট্টা। শোনা যায় সুন্দরী বিবাহিতা জোয়ালার সাথে বিদেশেও ছুটি কাটিয়েছেন আজহার। কিন্তু দুজনের কেউই এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি। কয়েকদিন আগেই এই সম্পর্কের বিষয়ে জোয়ালাকে প্রশ্ন করতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। আবার এরইমধ্যে জল্পনা শোনা গেল আজহারের তৃতীয় বিয়ে নিয়ে। দীর্ঘদিনের বান্ধবী মার্কিনী শ্যানোন মারিকে নাকি তিনি বিয়ে করছেন। তাহলেই ভাবুন!

ভারতের সরকারি স্টেট ব্যাঙ্কের একজন কর্মী থেকে একদিন দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। আবার সেখান থেকেই উল্কা পতন ঘটেছে তাঁর জীবনে। এরকম কেচ্ছা-কলঙ্ক-রঙিন জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে বায়োপিক। আজহারের চরিত্রে অভিনয় করছেন ইমরান হাসমি। প্রথম স্ত্রী নওরিনের চরিত্রে আছেন প্রাচী দেশাই এবং সঙ্গীতা বিজলানির চরিত্রে অভিনয় করছেন নার্গিস ফাখরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here