আহসান উল্লাহ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রকাশ

0
240

গাজীপুরের আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ বুধবার আপিলের ১৮২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই মামলায় গত ১৫ জুন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ। এতে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২২ জনের মধ্যে ছয়জনের দণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকিদের মধ্যে ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৭ জন খালাস পান। বাকি দুই জন বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ২৮ আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১১ জন খালাস পেয়েছেন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর একজন পলাতক থাকায় তার ব্যাপারে কোনো রায় দেয়নি আদালত। আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে-নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু (পলাতক), হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরুর। মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ আলী, আনোয়ার হোসেন আনু, জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর (পিতা আবুল কাশেম), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, আবু সালাম ওরফে সালাম ও সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, মশিউর রহমান মশু। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান আমির হোসেন, বড় জাহাঙ্গীরের পিতা নূর হোসেন, ফয়সাল, লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, খোকন ও দুলাল মিয়া। বিচার চলাকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছোট রতন ও আল আমিন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের নুরুল আমিনের দণ্ড বহাল রয়েছে। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনিরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তওহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় আপিল করেননি। দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে বিএনপি জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৭ মে দুপুরে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের পুত্র নামে পরিচিত জাতীয় ছাত্রসমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম দীপুকে। এ ছাড়া এজাহারে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান প্রায় দুই মাস তদন্ত শেষে ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতাকর্মী। আর পাঁচজন আসামী বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে মোট ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আর দুজন খালাস পান। আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। আর দুই জন মারা গেছেন। ওই বছরই আসামিরা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলের ওপর চলতি বছর ছয় মাসে ৩৪ দিন শুনানির পর ১৫ জুন আপিলের রায় ঘোষণা করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here