শ্বশুর বাড়ীর অত্যাচারে মৃত‌্যুর সংঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আকলিমা

0
555

গার্মেন্টস কর্মী আকলিমা সমাজের অন্য দশটি মেয়ের মতই লাল শাড়ি পড়ে বিয়ের পিড়িতে বসে স্বপ্ন সাজিয়েছিল একটি সুখের সংসারের। দিনে দিনে সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইং সালে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার মোকামিয়া গ্রামের মোঃ আমজত আলী ও মোসাঃ কুলসুম বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র শফিকুল ইসলাম এর সাথে আকলিমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর ২০১৩ ইং সালে আকলিমার বাবা মারা যায়। বিয়ের ৩ বছর পর আকলিমার কোলে জন্ম নেয় জারিয়া আক্তার সুমাইয়া (২)। সুমাইয়ার বয়স যখন ৬ মাস তখন আকলিমার সুখের ঘরে দুঃখের আগুন ধরায় যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধি। বিয়ের পূর্বশর্ত ছিল একলক্ষ টাকা যৌতুক দিতে হবে কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যুতে যৌতুকের টাকা যথা সময় পরিশোধ করতে পারেনি আকলিমা। তারপরে শুরু হয় আকলিমার উপর শারিরীক ও মানুষিক অত্যাচার। অনেক কষ্টে উপার্জন করে যৌতুকের টাকা পরিশোধ করে তার পরিবার কিন্তু তারপরও ধারাবাহিক ভাবেই চলতে থাকে নির্যাতন, রেহাই পাইনি দুধের শিশু সুমাইয়াও।
২৬ মার্চ ২০১৬ ইং সালে সুমাইয়ার বাবা সুমাইয়ার মাকে বেধম প্রহর করে টাকা পয়সা ও গহনা নিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে নিজ বাড়ি ময়মনসিংহে যায়। সুমাইয়ার মা আকলিমা বারবার ফোনে কল করেও সুমাইয়ার বাবার হদিস পায়নি। অবশেষে সুমাইয়ার মা চলে যায় তার শ্বশুড় বাড়িতে সুমাইযার বাবার খোঁজে। সেখানে যাওয়াতে তার উপর যোগ হয় অত্যাচারের নতুন মাত্রা। তার সাথে ঝগড়া ঝাটি ছিল নিত্ত নৈমেত্তিক ব্যাপার।
আকলিমা বলেন, ‘শ্বশুড় বাড়িতে মাত্র একমাস ছিলাম তার মধ্যে ২০/২৫ দিনই আমার গায়ে হাত তোলে সবাই। পান থেকে চুন খসলে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি চুল ধরে মারত। স্বামীর মেঝ ভাই সাইফুল ইসলাম (৩০) একদিন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বেহুশ করে ফেলে আমাকে। স্বামীর কাছে বিচার দিলে সে সারা শরীরে পিটিয়ে জখম করে দেয় আর বলে আরও টাকা না দিলে তোকে মেরে গুম করে ফেলব’।
শ্বশুড় বাড়ির এইসব পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতন সইবার জন্য মুখের উপর হাত চাপা দেয়ার শক্তি তার থাকলেও মনের উপর হাত চাপা দেয়ার শক্তি যে তার ছিল না।
একসময় আকলিমা তার মাকে জানায় “মা আমাকে বাঁচাও! আমাকে ওরা বাঁচতে দিবে না’’। মেয়ের এই করুন আহাজারি শুনে গত ১২ আগষ্ট ২০১৬ ইং তারিখে আকলিমার বিধবা মা, ফুফি মনোয়ারা বেগম, ছোট চাচা রফিক মিয়া, স্থানীয় দুইজন মেম্বর শহিদুল্লাহ ও মতি-কে নিয়ে ঐ দিনই আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আসার পথে আকলিমার শ্বশুড় বাড়ির লোকবল তাদেরকে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে লিখিত রেখে ছেড়ে দেয়।
আকলিমা এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর মুখে পাঞ্জা লড়ছে। এই ভাবে আর কত অত্যাচারিত হবে সেলাই দিদি মনি আকলিমারা। যেখানে বিচারের বানী নিভৃতিতে কাঁদে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here