গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো কুটিংস লিঃ ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
আহতদের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, গাজীপুরস্থ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ শনিবার ভোর ৫টা ৫৫মিনিটে বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিডি আক্তারুজ্জামান বাসস’কে জানান, টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো কুটিংস লিঃ ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। আগুনের ভয়াবহতা দেখে পর পর সদর দফতরসহ জয়দেবপুর, কুর্মিটোলা, মিরপুর, উত্তরা, ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টসহ প্রায় সব খবর ফায়ারকে জানানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারখানার ৪তলা ভবনটি উপরের ছাদ ধসে বিসিকের রাস্তার ওপর এবং সোনালী ব্যাংকের পেছনের অংশে ও কাসেম মাতবরের বাড়ীতে এবং একটি গোডাউনের ওপর গিয়ে পড়ে।
ওই রাস্তায় চলাচলকারী রিক্সারোহী মহিলা যাত্রীসহ ৩জন নিহত হয়। এদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ২০ জন দাঁড়িয়েছে।
নিহতের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), কারখানার শিফট ইন চার্জ শুভাষ (৪০), প্রিন্টিং হেলপার রফিকুল ইসলাম (২৮), সিকিউরিটি গার্ড হান্নান (৪৫), অপারেটর মামুন (৪০), অপারেটর জয়নুল (৩৪), ক্লিনার শংকর (৩৮) ও ক্লিনার রেদোয়ান (৩৫)।
এদিকে উত্তরা ফায়ার বি.গ্রেডের আমিনুল ইসলাম ৭টা ২৯ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন।
এছাড়া আরও ১৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রিপন দাশ (৩৫) ও দিলীপ চন্দ্র দাশ (৩৬)। রিপন দাশের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দিলীপ চন্দ্র দাশের ৮ শতাংশ পুড়েছে। বাকিরা জরুরি বিভাগের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত।
টঙ্গী ৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: মো. পারভেজ জানান, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
নিহতদের ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গুরুতর আহত ওই কারখানার শ্রমিক রুবেল জানান, তারা ভোরে কাজে যোগদানের পর পরই কারখানার বয়লার বিস্ফোরিত হয়। কারখানাটিতে প্লাষ্টিক পেপারের প্রিন্টিং কাজ করা হয় এবং গতকাল ২৫ টন কেমিক্যাল কারখানায় আনা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিসের জয়েন্ট সেক্রেটারী এডমিন আনিস মাহমুদ, মহাপরিচালক লে. কর্ণেল মোশারফ, ফায়ার হেড কোয়াটারের স্টেশন অফিসার সারোয়ার এ খান, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ সুপার সোয়েব আহম্মেদ পিপিএম। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান খান কিরন, সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার ডিজিএম একে এম রফিকুল ইসলাম, ৫৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন, শ্রমিকলীগ নেতা মতিউর রহমান বি.কম, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহ সেলিম জানান, তার গোডাউনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কাসেম মাতবরের জামাতা মিলন মিয়া জানান, আমরা কোন রকম প্রাণ নিয়ে সবকিছু ছেড়ে দৌড় দিয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের সবকিছু শেষ।
ওই কারখানায় বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিংয়ের কাজ করা হতো। প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানানো হতো। এই কারখানায় তিন শিফটে প্রায় ২১শত শ্রমিক কাজ করতো। যখন বিস্ফোরণ হয় তখন রাতের শিফটে লোকজন কাজ করে সকালে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটে।
জানা গেছে, রাতে শিফটে দেড়শতাধিক লোক কাজ করছিল। সকালেও শিফটের কিছু লোকও কারখানায় প্রবেশ করেছিল।
বিস্ফোরণের পর ওই কারখানা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুন ধরে যায়। দ্রুত আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকান্ডের ফলে ৪তলা ওই ভবনের একাংশ ধসে পড়ে এবং সমস্ত কক্ষে আগুন লেগে সকল মালামাল পুড়ে যায় এবং আহত নিহতের ঘটনা ঘটে। কারখানাটির মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন বলে জানা যায়।
এ দিকে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।