ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে যা করতে পারেন

0
4462

কর্মব্যাস্ত জীবনের প্রতিনিয়তই আমাদের ছুটে চলতে হয় জীবন ও জীবিকার খোঁজে। আর তাতে রোদ-বৃষ্টি-ঠান্ডা সবই সহ্য করতে হয় আমাদের ত্বককে। এভাবে ক্রমোশই আমাদের ত্বক হারায় তার প্রকৃত উজ্জ্বলতা, হয়ে ওঠে রুক্ষ। ফলে ত্বকে দেখা দেয় ব্রণ, মেছতার মত চর্মরোগ। ত্বক ধারণ করে কালচে বর্ণ। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা একটি স্বস্থ্যউজ্জ্বল ত্বকের পূর্ণাঙ্গ সৌন্দরর‌্য্য। আর তাইতো ত্বকের উজ্জ্বল্যতা ফেরাতে বিভিন্ন চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পরি অনেকেই।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও ত্বক ফর্সা করা দুটি পৃথক বিষয়। প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণের সময় সুন্দর-উজ্জ্বল ত্বক নিয়েই পৃথিবীতে আসে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এই বর্ণ পরিবর্তন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রসাধনি কোম্পানি যদিও ত্বক ফর্সা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন পন্য সরবরাহ করছে। বাস্তবতা এটাই যে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কৃষ্ণ বা শ্যাম বর্ণ ফর্সা করা সম্ভব নয়। ওই সকল পণ্য কেবল ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে। ত্বকের উজ্জ্বলতার হ্রাস-বৃদ্ধি একটি আপেক্ষিক বিষয়। ত্বকের স্বাস্থ্য সচেতনতা, খাদ্যতালিকা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন দ্বারা ধুলোবালি, দূষণা, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে ত্বকে পোড়াভাব, কালচে দাগ, বলিরেখা ইত্যাদি দূর করে হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

মানুষের ত্বকে মেলালিন নামে এক ধরনের পদার্থ রয়েছে যা মানুষের ত্বকের রং নির্ধারন করে। যে ত্বকে মেলালিন যত বেশি সেই ত্বক তত কালো। আর সাইন্টিফিক্যালি এই মেলালিন কমানোর কোনো চিকৎসা বা ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। সূর্যের তাপ সরাসরি ত্বকের উপর পড়লে ত্বকের রঙ ধীরে ধীরে কালচে হতে শুরু করে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ত্বকে থাকা মেলানিন এর মাত্রা বৃদ্ধি। সূর্যের ক্ষতিকর ইউভিবি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য মেলানিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক কালচে আবরণ ধারণ করে।

আমাদের ত্বকের টিস্যু ৩ ভাগে বিভক্ত। যথাঃ এপিডেরমিস, ডেরমিস (কল্লাজেন এলাসটিন ফাইবার), হিপোডেরমিস (যা খালি চোখে দেখা যায় না)। এপিডেরমিস আমাদের ত্বকের উপরের অংশ, যা আমাদের ত্বককে প্রতিরক্ষা করতে সাহায্য করে। এপিডেরমিসের আবার ২টি সেল আছে। যথঃ ক্যারাটিন, ম্যালানিন। ক্যারাটিন আমাদের ত্বককে মজবুত রাখতে সাহায্য করে আর ম্যালানিন আমাদের পিগমেন্ট বা রং তৈরী করতে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিদ্যার এসব জটিল কথা এখানে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, আমাদের বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ফেয়ারনেস ক্রিম যে এসব ত্বর পরিবর্তন আনতে পরে না তা বুঝানো। অর্থাৎ ত্বক ফর্শা করতে হলে এসব স্তরের রং পরিবর্তন করতে হবে যা আদৌ সম্ভব নয়।

এখন হয়তো অনেকেই ভাবছেন যদি তা-ই হয় তাহলে জন্মানোর সময় যে উজ্জ্বল ত্বক নিয়ে সবাই জন্মায়, তা কিভাবে কালচে বর্ণ ধারণ করে? এমনটা যারা ভাবছেন তাদের জন্য বলছি, ত্বকের স্তরের পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত সূর্যে্যল ক্ষতিকর অতি বেগুন রশ্মি, ধুলোবালি ও দূষণের ফলে আমাদের ত্বকের উপর স্তরে হাজার হাজার মৃত কোষ জমে থাকে। এগুলো ধীরে ধীরে ত্বকের উপরে কালচে আবরণ তৈরি করে। এছাড়া আগেই বলেছি সূর্যের সংস্পর্শে মেলানিনের উপস্থিতির কারণেও ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ করে। অর্থাৎ এখানে ত্বকের গঠন বা স্তরের কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা। বরং ত্বকের সবচেয়ে উপরের স্তরের উপর জমে থাকা মৃতকোষ আর মেলানিনের উপস্থিতিতে ত্বক তার প্রকৃত সৌন্দরর‌্য্য হারাচ্ছে।

উপরের লেখা দেখা নিশ্চিয় অনেকেই দুঃশ্চিন্তা করতে শুরু করেছেন। কিন্তু না, দুঃশ্চিতন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ  এই সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদের কাছেই রয়েছে। ত্বকের প্রতি আপনার একটু বাড়তি সচেতনতা ও যত্নই আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো উজ্জ্বলতা। সেই সাথে একটি সুষম খাদ্য তালিকা আর জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে আপনি পেতে পারে একটি স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক। আপনার ত্বকের ধরণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান, তার জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা নির্বাচন, কিছু বিশেষ অভ্যাস সৃষ্টির মাধ্যমের আপনি নিজেই আপনার ত্বককে করতে পারেন লাবন্যময়। এছাড়া উন্নয়নশীল বাংলাদেশ এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশ উন্নতি লাভ করেছে। আপনার নিকটস্থ যে কোনো রূপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন আপনি। রূপ বিশেসজ্ঞগণ আপনার এধরণের সমস্যা সমাধানের সঠিক দিক নির্দেশনা দিবে আপনাকে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন লেজার চিকিৎসালয়। যেখানে এধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। লেজার মেডিক্যাল সেন্টার এমনই একটি প্রতিষ্ঠান। ক্লিনিকটির ওয়েব সাইট: http://www.lasermedicalbd.com/index.htm থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আপনারা। অথবা বিভিন্ন হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞগনের পরামর্শও গ্রহণ করতে পারেন আপনারা। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিজেকে সচেতন জীবনযাপন ও আদর্শ খাদ্যতালিকায় অভ্যস্থ করা। তাহলেই স্থায়ীভাবে আমরা আমাদের ত্বকেরে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পাববো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here