চার লাখ ২১৮ কোটি টাকার বাজেট আসছে

0
222

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২১৮ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বছরের বাজেটের আকার এবারের তুলনায় ৫৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া সরকারের একজন সিনিয়র সচিব এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭.৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের।

আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হবে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট থেকে আগামী এক বছরে উন্নয়নমূলক  কাজে সরকার এই অর্থ খরচ করবে। চলতি অর্থবছর এডিপিতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

সরকারের ওই কর্মকর্তা জানান, চার লাখ ২১৮ কোটি টাকার বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করব্যবস্থা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এতে করে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫.৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ও সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হবে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ভর্তুকি দেওয়া হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন এবং সরকার কয়েক দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন অর্থবছরে ভর্তুকির পেছনে কম অর্থ খরচ হবে।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হবে। এ খাতে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ থাকবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দের পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাজেটে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ থাকবে শিক্ষা খাতে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ পাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাত।

নতুন অর্থবছরে ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হলেও নেওয়া হয়েছে খুবই কম। উল্টো সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে অধিক অর্থায়ন হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ কম নিতে হয়েছে।

আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মাসজুড়ে আলোচনা ও বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করে সংসদে ৩০ জুন বাজেট পাসের পর কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এটিই বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here