ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন শুরু হয়েছে। সোমববার সকালে মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্র কাননের স্মৃতিসৌধে পতাকা উত্তালনের মাধমে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়।
সূর্য উদয়ের সাথে সাথে পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। এ সময় মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে নানা কমসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নেতৃবৃন্দ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, আনছার সদস্যরা ‘হে তারুণ্য তুমি দাঁড়াও’- শীর্ষক উপস্থাপনা, পরে শেখ হাসিনা মঞ্চে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
মুজিবনগর দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। জনসভাকে ঘিরে মেহেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমপি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবন্দ অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়। বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
অন্যদিকে, জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি সরকার গঠিত হয়েছে।
পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগর আম্রকাননে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরের দিন দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে যে খবরটি ছাপা হয় তা হলো ‘১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণ হলো বাংলাদেশ সরকারের’। অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধানদের গার্ড অব অনার দেয় স্থানীয় আনসার ক্যাম্পের ১২ জন সদস্য।
এদিন, দেশ-বিদেশের সাংবাদিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ ভারতীয় হাজারো সেনাসহ এলাকার মুক্তিকামী মানুষ উপস্থিত হন। গার্ড অব অনার দেওয়ার পর পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সূচনা হয়।