চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে ১৩২টি মৃতদেহ উদ্ধারের পর আজ বুধবার আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় সন্ধ্যায় স্থগিত করা হয় অভিযান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা সকাল ৮টা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। রাঙামাটি শহর ও এর আশপাশের এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা পড়ে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এখনো বিভিন্ন এলাকায় ১০-১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজুরুল মান্নান গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, আজ বুধবার উদ্ধার অভিযান বেগবান করতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে ৮০ জনের বিশেষ একটি উদ্ধার দলের আসার কথা রয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান মানিকছড়ির ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, বান্দরবানে সকাল ৮টা থেকে ফের অভিযান শুরু হয়েছে। এ জেলায় মা-মেয়েসহ বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সেখানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবহাওয়া কিছুটা ভালো। তাই দ্রুত উদ্ধার কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী রাঙামাটিতে ৯৮ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন ও বান্দরবানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙামাটিতে নিহতদের মধ্য মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনা সদস্যও রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চালানোর সময় পাহাড়ধসের কবলে পড়েন তারা। এ ছাড়া পাহাড়ধসে ১০ সেনা সদস্যসহ আহত হয়েছে শতাধিক। আরেক সেনা সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার রাত ও গতকাল ভোরে পাহাড়ধসের এসব ঘটনা ঘটে। পরে বৃষ্টির মধ্যেই সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তবে বৃষ্টির কারণে দুর্গম এলাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি। ফলে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, অনেক জায়গায় ধসের মাটি সরানো যায়নি।
বৃষ্টি, ঢল ও পাহাড়ধসের কারণে পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ সোমবার রাতেই বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।