চুমু রোমান্টিকতার অন্যতম বিষয়। অন্যকে চুমু খাওয়া বিশেষ করে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই বেশি দেখা যায় কিংবা স্বামী-স্ত্রীর বেলাতেই। ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রের চুমুর স্থান অনেক উপরে। সেটা হোক প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা ভালোবাসার যে কোন বন্ধনে চুমুর গুরুত্ব ব্যাপক। আজ বিশ্ব চুমু দিবস।
চুমুর ইতিহাস
২০০৬ থেকে বিশ্ব চুমু দিবস পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর জুলাই মাসের ছয় তারিখে বিশ্বব্যাপী এই দিবস উদযাপিত হচ্ছে। তবে খ্রিস্টের জন্মের ২০০০ বছর আগের ইতিহাস অবশ্য জানাচ্ছে অন্য এক চুম্বন তত্ত্বের কথা। সে সময় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে প্রচলিত ছিল এক অদ্ভুত প্রথা। দুই জন মানুষের ঠোঁটসহ মুখাবয়ব নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে নাকি মানব শরীরের আত্মার একত্রীকরণের পথ সহজ হয়ে ওঠে। এই বিশ্বাসে আত্মায় আত্মায় দুই জন মানুষ একে অপরকে চুম্বন করতেন। সেই রীতিই কালক্রমে ভারত, রোম, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগোষ্ঠীর জীবনে উৎসবে পরিণত হয়।
‘চুমু’ শিরোনামে বিখ্যান এ ছবিটি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী অ্যালেন কুপার।
১৯৭২ সালে ইরানের হানসালুতে মাটির নীচে চুম্বনরত দুটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। পেনিসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতানুসারে ওই প্রেমিক যুগলের মৃত্যু আটশো খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। আবার কারও কারও মতে ওই প্রেমিক যুগল দু-হাজার বছরের বেশি পুরনো নয়। অনেকেই এই প্রেমিক যুগলের মৃত্যুকে সহমরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং চুম্বনের বিস্তৃতি এক সভ্যতা থেকে অন্য সভ্যতায়। চুম্বন শুধুমাত্র ক্ষণিকের খেলা নয়। মা বাবার সন্তানের প্রতি চুম্বন হোক বা প্রেমিক প্রেমিকার ঠোঁটে ঠোঁটে আলিঙ্গন, চুম্বন দেশ কাল ভেদে পেয়ে যায় উৎসবের মর্যাদা। বলা বাহুল্য, প্রেমিক-প্রেমিকার চুম্বন উৎসবের আধুনিক পোশাকি নাম এখন ‘কিস ডে’।
কত রকমের চুমুর কথা
ঠোঁটের অন্দরে অন্দরে কথা হয় এই চুমুতে। জিভ ছুঁয়ে যায় মুখের ভিতরের জমি। এমন নামকরণের কারণ, বিশ শতকের গোড়ায় ফ্রান্সে এই ধরনের চুমু খাওয়া শুরু হয়েছিল। ফরাসীরা বরাবরই যৌনতায় নতুন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসে। সেখান থেকেই এই চুমু আর তার নামের উৎপত্তি। নাকে নাক ঘষে আলতো আদর। এই হল এস্কিমো কিস। প্রথম এই বিষয়টি সকলের নজরে পড়ে এস্কিমোদের জীবন নিয়ে ১৯২২ সালে তোলা রবার্ট ফ্লহার্টি-র পৃথিবী বিখ্যাত তথ্যচিত্র ‘নানুক অফ দ্য নর্থ’-এ। একজনের ঠোঁটের ফাঁকে যখন আর একজনের ঠোঁট থাকে, অনেকটা স্যান্ডউইচের মতো, তখন তাকে বলে সিঙ্গল-লিপ কিস। প্রেমের প্রথমদিকে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে এমন কিস খুবই রোম্যান্টিক। চুমু খাওয়ার সময় যদি দু’জনের চোখের পাতা ঠেকাঠেকি হয়ে যায় তবে প্রজাপতির পাখার মতোই ডানা ঝাপটায়। তেমন চুমুই হল বাটারফ্লাই কিস। এমন চুমুর কোনও সময়জ্ঞান থাকে না। এ হল অনন্ত চুম্বন যার শুরু আছে কিন্তু কোনও শেষ নেই। স্পাইডারম্যানও চুমু খায়। সে ঝোলে শূন্য থেকে উলটো হয়ে আর তার প্রেমিকা দাঁড়িয়ে থাকে মাটিতে।
আমেরিকায় অবস্থিত ‘শান্তির আলিঙ্গন’ ভাস্কর্যটি বানিয়েছেন সেওয়ার্ড জনসন।
কিন্তু তাতে প্রেমের গভীরতার কোনও অভাব থাকে না। অভিনব নিঃসন্দেহে। শূন্যে ঝুলতে হবে না, বিছানায় শুয়েই এমন মিষ্টি চুমু খেতে পারেন। এ হল প্রেম-খেলার চুমু। সঙ্গীর ঠোঁটে লিপ গ্লস বা লিপস্টিক মাখিয়ে দেওয়া হয় আগে। তার পর মুহুর্মুহু চুম্বন যতক্ষণ না একজনের ঠোঁটের রং সম্পূর্ণভাবে চলে যায় অন্যজনের ঠোঁটে। জিভ দিয়ে একে অপরের ঠোঁট লেহনই হল লিজি কিস। বেশ একটা কিংকি ভাব রয়েছে গোটা ব্যাপারটায়। চোখের পাতায় দেওয়া চুমু। প্রচলিত ধারণা হল, অ্যাঞ্জেলরা ঘুমের মধ্যে এসে চোখের পাতায় চুমু দিয়ে যায়। প্রেমে কতটা মাধুর্য রয়েছে তা বোঝা যায় এই চুমুতে। ঠোঁট ছাড়িয়ে সারা শরীরে যখন ছড়িয়ে যায় চুমু, তখন তাকে বলে টিজিং কিস। যত ভাল হয় এই চুম্বন, ততই জমে ওঠে ফোর-প্লে। একটি ছোট্ট আইস কিউব থাকে দুই ঠোঁটের মধ্যে, যা চালাচালি হয় একে অপরের মুখে আর বরফিলা শিহরণে আরও উত্তেজক হয়ে ওঠে চুম্বন।
বরফের বদলে একটি রসালো ফল নিয়ে এই চুমু। আদরে আদরে ফলের নির্যাসটুকু এক ঠোঁট থেকে অন্য ঠোঁটে ছড়িয়ে যায় আর ক্রমেই আরও সুস্বাদু হয়ে ওঠে আদর। গভীর চুমু খেতে খেতে দাঁত যখন সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন চুমুর নামও পাল্টে যায়। অবশ্যই আগ্রাসক এই চুমু। কিন্তু এই আগ্রাসন একান্ত প্রেমময়। যেমন রক্তচোষারা দাঁত বসায় ঘাড়ে, তেমন করেই আলতো করে কামড়ে কামড়ে চুমুই হল ভ্যাম্পায়ার কিস। ঠিকঠাক এই চুমু খেলে উত্তেজনা বাড়ে প্রবলভাবে। ঠোঁট থাকে একটু দূরে দূরে আর জিভে জিভে কথা হয়। গভীর বন্ধুত্বে আর উদ্দাম যৌনতায় বার বার ঘটে যায় এমন চুমু।
চুমুর উপকারিতা
চুমু যদি ২ সেকেন্ডের বেশী সময় ধরে হয় তাহলে এক ধাক্কায় ৩-৪ ক্যালোরি কমতে পারে। প্রত্যেক মানুষের মুখে অজস্র-সহস্র ব্যাকটেরিয়া থাকে। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে চুম্বনের সময়ে অজান্তেই প্রায় ১ বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়ার আদান-প্রদান হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন কাউকে অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানাতে, শুভেচ্ছা জানাতে করমর্দন করার চেয়ে ভাল চুমু খাওয়া। কারণ তা অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর। দাঁতের দ্রুত ক্ষয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ চুম্বন। সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অতিরিক্ত চুম্বনের ফলে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায় দাঁত।
চুমু দিলে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যকার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। চিকিৎসকদের ভাষায়, চুমু দিলে অক্সিটোসিন হরমোন উৎপাদন হয়। এটি একে অন্যের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কে চুমু আনন্দের বাড়তি মাত্রা যোগ করে। না বলা অনেক কথাও এর মধ্য দিয়ে বলা হয়ে যায়। চুমুর মাধ্যমে নারী-পুরুষের একে অপরের থুথু বিনিময় হয়। এটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানুষের শরীরের ইমমুনি সিস্টেম স্বাভাবিক রাখে। যদি কোনো কারণে কেউ মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত থাকে তাহলে তার কোনো মনোবিদের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। সে তার স্ত্রীকে চুম্বন করলেই তার মানসিক হতাশা দূর হয়ে যাবে। চুমু খাওয়ার সময় কখনো আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে আর বেড়ে যেতে পারে হৃৎস্পন্দন। এতে হৃৎপিণ্ডের ব্যায়াম হবে। এ ছাড়াও এর মাধ্যমে আরো কয়েকটি উপকার হয়।
যেমন এটি আপনার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন নিয়মিত হতে সাহায্য করে। রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এ কারণে চুমুর মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক হৃৎপিণ্ড বজায় রাখা সম্ভব।যদি কখনও কারও মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করে তাহলে স্ত্রী বা স্বামীকে খুব কাছে টেনে নিয়ে লিপ কিস করুন। তাহলে দেখবেন সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ব্যথা দূর হয়ে যাবে। চুমু মানুষের শরীরের স্ট্রেস হরমোনর কার্যক্ষমতা কমিয়ে আনে। এটি মানুষকে বিষাদের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে সাহায্য করে। চুমু মানুষের চেহারায় তারুণ্য ভাব বজায় রাখে। যদিও এর কারণে শরীরের কিছু ক্যালোরি ক্ষয় হয় তারপরও এটি মানুষের শরীরের জন্যে খুব উপকারী।