সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে তারা দিব্যি ভালো আছে: মির্জা ফখরুল

0
14

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রতি বছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারদিকে শুধু হাহাকার। তবে এই হাহাকার সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। তারা সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দেদারসে অর্থ লোপাট করছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে।

বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে তা বর্তমান ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বার্ষিক ঘোষণাপত্র মাত্র। এই বাজেট কল্পনাবিলাসী বাস্তবায়ন অযোগ্য এক উচ্চাভিলাষী বাজেট। এটি স্রেফ দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত “অর্থ লুটেরাদের বাজেট”। বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে যাওয়া, বেপরোয়া অর্থপাচার, জনগণের কাঁধে রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা একেবারের জন্যও স্বীকার করা হয়নি। পরিত্রাণের উপায়ও বলা হয়নি। তেমনিভাবে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের ধারণাকে।

তিনি বলেন, এ বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোকদেখানো বাজেট, জনকল্যাণের নয়। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা অর্জনযোগ্য নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও তা কীভাবে অর্জন করা হবে তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেটে নেই। চলতি অর্থবছরেও ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৫ শতাংশ। সংশোধনী বাজেটে তা পরে ৬.৩ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এবারও ৭.৫ শতাংশ টার্গেট অর্জন সম্ভব হবে না। কেননা অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এ চাপ মোকাবিলায় বাজেটে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহণ এবং খাদ্যসহ তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।  তবে বাস্তবতা হচ্ছে চীন, আমেরিকা, ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিশেষভাবে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।

আপনারা জানেন, দেশের অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ে রয়েছে। ডলারের সংকট প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে প্রায় সকল ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। সরকারি হিসাব মতে গত ৭ বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বিশ্বস্ত সূত্রমতে, ইতোমধ্যে নতুন নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপর। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকব্যবস্থায় নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। ব্যাংকের অতিরিক্ত ক্যাশ লিকিউডিটি কমেছে ৫৭ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। তবে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। গত বছরের প্রথম ৯ মাসেই খেলাপি বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here