এবার অবহেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুমৃত্যুর অভিযোগ

0
10

ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার শিশুটির স্বজনরা সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাদের বিচার দাবি করেন।

শিশুটির মা সুফিয়া পারভীন বলেন, শরীরে জ্বর থাকায় তার একমাত্র মেয়ে হাবিবা হীরা চৌধুরীকে (৬) সেন্ট্রাল হাসপাতালে অধ্যাপক এএফএম সেলিমের অধীনে ৭ জুলাই ভর্তি করি। পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। প্রথমে স্যালাইনের সঙ্গে জ্বরের ওষুধ প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওই রাতেই তাকে স্যালাইনের মাধ্যমে ‘রোফিসিন’ নামের উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এভাবে কয়েক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর আমার মেয়ের লিভার ড্যামেজ হতে থাকে। তার পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসতে শুরু করে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও নার্স ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘চারটি ফ্লোরের জন্য মাত্র একজন ডিউটি ডাক্তার থাকেন। বসেন সপ্তম তলায়। বেশিরভাগ সময় থাকেন না। অধ্যাপক সেলিম ভর্তির পর থেকে মাত্র তিনবার রোগীর কাছে এসেছেন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশেষে ১০ জুলাই রাতে ডাক্তার আমার মেয়েকে দেখতে এসে পালস পাচ্ছিলেন না। এরপর বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। তাকে জরুরি ভিত্তিতে পিআইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে। কিন্তু সেন্ট্রাল হসপিটালে এই ব্যবস্থা নেই। তিনি হাবিবাকে ঢাকার মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। মেয়ের কথা ভেবে কথা না বাড়িয়ে রাত ১১টার দিকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বেশকিছু পরীক্ষার মধ্যে ফেরিটিন পরীক্ষা দেওয়া হয়। যেখানে একজন শিশুর ফেরিটিনের মাত্রা ৭ থেকে ১৪০ থাকার কথা, সেখানে হাবিবার ফেরিটিন ধরা পড়ে ২১ হাজার ৪৮৩।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা সুফিয়া পারভীন বলেন, এরমধ্যে শ্বাসকষ্ট, হার্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। আর রিপোর্ট দেখেই সেখানকার চিকিৎসকরা বিড়বিড় করে বলেন, ‘সব তো শেষ করে নিয়ে আসছেন। রোগীর লিভার ফাংশন পুরো শেষ হয়ে গেছে।’ এরপর পিআইসিইউতে নিয়ে চেষ্টা শুরু করেন তারা। কিন্তু আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে সুফিয়া পারভীন আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ডেঙ্গু রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় না। আর যদি কোনো কারণে দিতেই হয়, তাহলে ফেরিটিন পরীক্ষা করে তারপর প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে সেটা করা হয়নি।’

গত মাসে সন্তান জন্ম দিতে এসে কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় আসে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা বিদেশ থাকার পরও তার নাম করে আঁখিকে সেখানে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডেলিভারির সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে মায়ের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংযুক্তা সাহার পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসে। এই ঘটনায় হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক গ্রেফতারও হন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রসঙ্গ টেনে হাবিবার মা সুফিয়া পারভীন বলেন, ‘ধারণা করেছিলাম এতকিছু হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে হয় তাদের ভুল বুঝতে পেরে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তারা সেটা করেননি।’

তিনি বলেন, ‘জানি, আমি মেয়েকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অবহেলাজনিত কারণে আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here