বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা

0
12

তিমির চক্রবর্ত্তী:
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বয়ে আনে এক অনাবিল আনন্দ। সার্বজনীন এ দুর্গোৎসব শুধু বাঙালি হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দুর্গোৎসব ঘিরে বাঙালির মধ্যে গড়ে ওঠে এক সৌহার্দ্য-প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন। দেবী দুর্গা সব দেব-দেবীর সমন্বিতা পরমা শক্তি।
“দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।

উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।

রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।

ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।। ”
দূর্গা শব্দটিকে ভেঙ্গে বলা হচ্ছে- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিত।
দেবী দূর্গার সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে পুরাণে উল্লেখ আছে- মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গচ্যুত দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে শিব ও অন্য দেবতাদের নিয়ে শ্রী বিষ্ণুর কাছে এলেন। দনিজেদের দুদর্শার কথা জানিয়ে ব্রহ্মার কাছে জানতে চান, এ থেকে পরিত্রাণের পথ কি? স্বয়ং ব্রহ্মার দেওয়া বরেই মহিষাসুরকে বধ করতে পারবে না কোন পুরুষ। তখন বিষ্ণুর নির্দেশে সব দেবতার থেকে যে দেবীর জন্ম হয় তিনিই “দূর্গা”। পুরুষদের অবধ্য মহিষাসুরকে তিনবার বধ করেন দেবী দূর্গা। প্রথমবার অষ্টদশভূজা উগ্রচন্ডীরূপে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার দশভূজা দূর্গারূপে।
দেবী দূর্গা সাধারণত দশভূজা, তবে শাস্ত্রানুসারে তার বাহুর সংখ্যা হতে পারে চার, আট, দশ, ষোল, আঠারো বা কুড়ি।
পৌরানিক উপাখ্যান: ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে উল্লেখিত কিংবদন্তি অনুসারে দুর্গোৎসবের প্রবর্তক স্বয়ং কৃষ্ণ। এখানে বলা হয় কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দূর্গার আরাধনা করেন মধুকৈটভ দ্বৈত্যদয়ের হাত থেকে দেবতাদের রক্ষাকল্পে ব্রহ্মা। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দূর্গূাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাশা মুনির শাপে শ্রীভষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দূর্গাপূজা করেন তা ছিল চতুর্থ দূর্গাপূজা। এরপর থেকের পৃথিবীতে মুনিগণ সিদ্ধ ও দেবতাগণ এবং মনবগণ নানা দেশে নানা সময়ে দূর্গোৎসব আয়োজন করে।
দুর্গাপূজার কাহিনি শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে। চণ্ডী গ্রন্থে তিনটি খণ্ডে মোট ১৩টি অধ্যায় রয়েছে। এ গ্রন্থে আদ্যাশক্তি মহামায়ার সঙ্গে দোর্দণ্ড দানব অসুরদের সম্মুখযুদ্ধের বিবরণ বিধৃত। প্রখ্যাত দার্শনিক বৈষ্ণবাচার্য্য ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজির মতে, ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থ বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র। বেদাদি শাস্ত্রের মহাসত্য চণ্ডী আধ্যাত্মিক পরীক্ষা অর্থাৎ সাধনার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছে।’ চণ্ডীর প্রথম অংশে মধু কৈটব বধ, মধ্যম খণ্ডে মহিষাসুর বধ এবং উত্তর খণ্ডে শুম্ভু-নিশুম্ভু বধের কাহিনি বর্ণিত। প্রচীনকাল থেকেই সনাতন ধর্মে বৈদিক ও তান্ত্রিক নামে দুটি ধারা প্রচলিত। তান্ত্রিক ধারার পরিপূর্ণ রূপায়ণ ঘটেছে শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে।

সত্য যুগে রাজা সুরথ রাজ্যচ্যুত হয়ে বনে আশ্রয় নেন। সাংসারিক জ্বালা-যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজা সমাধি-বৈশ্যও বাড়ি ছেড়ে বনে চলে আসেন। উভয়েই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে ঋষি মেধষ মুনির শরণাপন্ন হন। সত্যদ্রষ্টা মুনিবরের পরামর্শে তারা দুর্গতিনাশিনী দুর্গা দেবীর পূজা করেন। তবে এ পূজা বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হয় বলে এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। অন্যদিকে ত্রেতাযুগে কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে সীতা উদ্ধারের নিমিত্ত লঙ্কাধিপতি রাবণের সাথে যুদ্ধের পূর্বে ১০৮টি নীল পদ্ম সহযোগে দেবী দুর্গার পূজার আয়োজন করেছিলেন। শরৎকাল দেবতাদের নিদ্রাকালীন সময় হিসেবে শাস্ত্রে বিবেচিত হওয়ার কারণে শ্রী রামচন্দ্রের আয়োজিত এই পূজাকে অকালবোধন বলা হয়ে থাকে।। শ্রীরামচন্দ্রের শরৎকালের এ অকাল বোধনই হলো বর্তমানকালের শারদীয় দুর্গোৎসব। হেমন্ত ঋতুতেও মা দুর্গার আগমন ঘটেছিল, যা কাত্যায়নী দুর্গাপূজা নামে খ্যাত।

মা ব্রহ্মময়ী। আদ্যাশক্তি অপরূপ শোভামণ্ডিত ত্রিনয়না। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক। সর্বালংকারে ভূষিতা দেবী দুর্গা। তিনি সর্বশক্তির আধার। মাতৃরূপে তিনি সর্বজীবে বিরাজ করেন। দশভুজা মা দুর্গার দশটি হাতে দশটি অস্ত্র শোভমান। ডান হাতে ত্রিশূল, খÿ ও চক্র। বাঁ হাতে শঙ্খ, ঢাল, কুঠার ও ঘণ্টা। মা দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে একা আসেননি। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতীকে। তার বাহন সাদা হাঁস, যা জ্ঞানের নির্মল ও শুভ্রতার নিদর্শন। সঙ্গে এনেছেন ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ ঐশ্বর্যের প্রতীক লক্ষ্মী দেবী। সঙ্গে আরও রয়েছেন জনশক্তির প্রতীক ‘সিদ্ধিদাতা’ গণেশ। সঙ্গে এসেছেন আত্মরক্ষা, শত্রু দমন ও বলবীর্যের প্রতীক কার্তিক। প্রতিটি শক্তির সমষ্টিরূপে দেবী দুর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে শ্রীরামচন্দ্রের অকাল বোধনে।

পূজা হলো শক্তির প্রতীক। দেব-দেবীর কৃপালাভের জন্য ভক্ত তার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভক্তি সহকারে দেবতার উদ্দেশে যে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন তা-ই পূজা বা উপাসনা। দেবতার প্রতীক হিসেবে প্রতিমা পূজা হিন্দু ধর্মে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। হিন্দুরা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে চিন্ময়ী জ্ঞানে পূজা করেন। তবে সেটা পুতুল পূজা নয়।

ভক্তের হৃদয়ের অকৃত্রিম ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মৃন্ময়ী মূর্তি চিন্ময়ী হয়ে ওঠে। তাই হিন্দুরা নিছক মাটিতে তৈরি মূর্তিকে পূজা করেন, বলা ঠিক নয়। কালবিজয়ী প্রবাদপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়- ‘পুতুল পূজা করে না হিন্দু কাঠ মাটি দিয়ে গড়া/ মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে যাই আত্মহারা।’
প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষীয় মহাষষ্ঠীর পুণ্য তিথি থেকে শুরু হয় দুর্গাপূজা। মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী তিথিত্রয়ে আরাধনা শেষে বিজয়া দশমীতে মা দুর্গা বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। তবে মৃন্ময়ী মূর্তির বিসর্জন হলেও ভক্তের হৃদয়ে চিন্ময়ী সত্তা চিরঅম্লান চিরভাস্বর। শক্তির জাগরণই মাতৃবন্দনার আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য। শক্তি ‘স্বয়ম্ভু’, ‘স্বপ্রকাশ’। আদ্যাশক্তি মহামায়াই মহাশক্তির বিচিত্র প্রকাশ মাত্র। শক্তিই চৈতন্যের লক্ষণ। প্রাণ বা শক্তিহীন ব্যক্তি শবদেহ মাত্র। তাই প্রাচীন ঋষিগণ সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের শুভশক্তির প্রতীক হিসেবে জ্যোর্তিময়ী দেবী দুর্গার আরাধনা করতেন। এ যুগেও সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ তাদের হৃদয়ের অর্ঘ্য নিবেদন করে আনন্দময়ী মা দুর্গার অর্চনা করেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে শক্তির অস্তিত্ব সর্বত্র বিদ্যমান। সনাতন ধর্মের ঋষিগণও শক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেন। তবে উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বৈজ্ঞানিক বিশ্বের সব বস্তুতে শক্তির প্রকাশ অবলোকন করেন। আর ঋষিগণ বিশ্বাস করেন সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতি একটি মহাশক্তি। বৈজ্ঞানিক এ শক্তিকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করেন। আর সনাতন ঋষি ও আধ্যাত্মিক পুরুষরা এ শক্তিকে জীব ও জগতের হিতার্থে অর্চনা করেন। ঋষিগণ সর্বশক্তির আধার মহামায়ার মধ্যে মাতৃস্নেহ দর্শন করেন। তাই তারা শক্তিকে ব্যবহার না করে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে বিশ্বের কল্যাণার্থে অর্চনার পথ বেছে নিয়েছেন।
শারদীয় দুর্গা উৎসব প্রথম বাংলাদেশের যে মন্দির থেকে শুরু হয়েছিল :
হিন্দু ধর্মের সার্বজনীন দুর্গা উৎসব প্রথম যে মন্দির থেকে শুরু হয়েছিল সেই মন্দির এখন বাংলাদেশে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহিরপুর (বর্তমানে গ্রামটিকে তাহেরপুর বলা হয়) গ্রামে ১৪৮০খ্রীষ্টাব্দে বাংলা ৮৮৭ বঙ্গাব্দে রাজা কংস নারায়ন তার রাজ ভবনেই প্রথম শুরু করেন।

তাহিরপুর রাজবংশ বাংলাদেশের প্রাচীন রাজবংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রাজবংশের আদিপুরুষ ছিলেন মৌনভট্ট। পরবর্তীকালে এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজা কংস নারায়ণ। তাঁর আসল নাম ছিল মুকুন্দ, পরে তিনি কংস নারায়ণ নামটি গ্রহণ করেন।
রাজা কংস নারায়ণ সুলতানি আমলে চট্টগ্রামে মগ দমনে বীরের ভূমিকা পালন করেন। পাঠান আমলে কিছুদিন ফৌজদারের দায়িত্বও পালন করেন। মোগল আমলে এসে কিছুকাল বাংলা-বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মোগল সম্রাট আকবর তাকে ‘রাজা’ উপাধি দেন।

সম্রাট আকবরের সময় বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিজমার হিসাবের জন্য সম্রাট তোডরমলকে নির্দেশ দেন এবং তোডরমল কংস নারায়নকে নিয়ে একাজ শুরু করেন, পরে হঠাৎ সম্রাট তোডরমলকে বিশেষ কাজে দিল্লীতে ডেকে পাঠান এবং জমিজমা হিসাবের বাকি কাজ কংস নারায়ণ সূচারুরূপে সম্পন্ন করেন এবং সকল হিসাব-নকশা ইত্যাদি দিল্লীতে পাঠিয়ে দেন। সম্রাট তার কর্মদক্ষতায় খুশী হন। এসময় তিনি ভেবেছিল পরবর্তী সুবেদার নিযুক্ত হবেন কিন্তু সম্রাট তা না করে দূত মারফত কংস নারায়ণের জন্য নানাবিধ মূল্যবান খেলাত, “রাজা” খেতাব এবং সুবে বাংলার দেওয়ান হবার জন্য খবর পাঠান। যোগ্যতা থাকার পরও সম্রাট তাকে সুবেদার নিযুক্ত না করে দেওয়ান হওয়ার খবর পাঠালে কংস নারায়ণ মনঃক্ষুন্ন হয়ে খেলাত এবং “রাজা” উপাধি গ্রহন করে বয়সের অজুহাত দেখিয়ে দেওয়ান পদ থেকে পদত্যাগ করে নিজের জন্মভুমি তাহিরপুরে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার বিশাল জমিদারির উন্নতি সাধনের জন্য আত্মনিয়োগ করেন।
তাহিরপুর এসে জমিদারির উন্নতির পাশাপাশি রাজা কংসনারায়ণ ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করেন। পাপমুক্তি বা প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্তে মহাযজ্ঞে ব্রতী হওয়ার জন্য তিনি তাহিরপুর জমিদারদের কূল পুরোহিতদের পরামর্শ চাইলেন। উপস্থিত পুরোহিতদের মাঝে বিখ্যাত তান্ত্রিক রমেশ শাস্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। তিনি উক্ত সভায় বলেন, “শাস্ত্রে বিশ্বজিৎ, রাজসূয়, অশ্বমেধ ও গোমেধ এই চার বিধি আছে, কিন্তু বিশ্বজিৎ এবং রাজসূয় যজ্ঞ শুধু সার্বভৌম সম্রাট করতে পারবে কিন্তু আপনি যেহেতু তাদের অধিনস্ত ভূ-স্বামী তাই এর অধিকারী নন। এ ছাড়া অশ্বমেধ এবং গোমেধ এ দুইটি কলিতে নিষিদ্ধ এবং ক্ষত্রিয়ের কর্ম তাই তাও সম্ভব নয়। তখন কংস নারায়ণ ঐসব যজ্ঞ ব্যাতীত কলিতে আর কি যজ্ঞ করা যাবে তা জানতে চাইলে রমেশ শাস্ত্রী কলির মহাযজ্ঞ দুর্গোৎসব পালনের পরামর্শ দেন। কারণ দুর্গোৎসব সকল জাতি এটি সম্পন্ন করতে পারবে, এতে সকল যজ্ঞের ফল পাওয়া যাবে, সত্য যুগে প্রথম সুরথ রাজা এ যজ্ঞ করেছিলেন। রমেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য উপস্থিত পুরোহিতরাও সমর্থন দিলে রাজা এই যজ্ঞ পালনে সর্বসম্মতভাবে মনোনিবেশ করেন।

তান্ত্রিক রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজা কংস নারায়ন প্রথম এই দুর্গোৎবের আয়োজন করেন এবং রমেশ শাস্ত্রীই এই যজ্ঞের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের রাজবাড়িতে।
পরের বছর তিনি একটি দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং সবার জন্য এই উৎসব উন্মুক্ত করে দেন। প্রথম দুর্গোৎসবেই রাজা সাড়ে আট লক্ষ টাকা মতান্তরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেন। রাজা কংসনারায়নের এই দুর্গোৎসব আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা লাভ করতে করতে একসময় সার্বজনীন পুজায় রুপ লাভ করে। বর্তমানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গোৎসব। যা সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা খুবই সম্মানের সাথে পালন করে থাকে।

শুভ মহালয়া থেকে চণ্ডীপাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানায় ভক্তকুল। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবার লক্ষ্যে মর্ত্যে আসে দেবী দুর্গা।
আর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবীর প্রথম দিনের পূজা আরম্ভ হয়। দেবী দুর্গাকে বোধনের দিন আজ। সায়ংকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হবেন তিনি। আর এর সঙ্গেই শুরু হবে বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।

বোধন শব্দটির অর্থ জাগ্রত করা। মর্ত্যে দুর্গার আবাহনের জন্য বোধনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। এ দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন। ষষ্ঠীর সকালেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর দশভূজার সামনে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পূজা পর্বে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এরপর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়। এর পর হয়, দুর্গার বোধন। তার পর অধিবাস, আমন্ত্রণের পর্ব। বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়।
এবছর ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের পূজা শুরু হবে আর ২৪ অক্টোবর দশমী পূজার মধ্যদিয়ে দেবীকে মর্ত্যলোক থেকে বিদায় জানানো হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here